Sunday, 20 February 2011

মুদ্রাস্ফীতি, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, কর্মসংস্থানের অভাব, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সমস্যা এবং কিছু প্রস্তাবনা।

বর্তমানে আরব আমিরাত দিরহামের বিপরীতে বাংলাদেশের মুদ্রার মান দাড়িয়েছে বিশ টাকায়। কিছু দিন আগেও যেটা আঠার টাকা ছিল। গত কয়েক মাসে দিরহাম এবং ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশের মুদ্রার মান পতন এবং কয়েকদিন আগে বাংলাদেশের প্রথম সারির বিশটি ব্যাংককে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক তলবের ঘটনা যথেষ্ট আশংকার সৃষ্টি করেছে। এছাড়াও কদিন আগে বাংলাদেশের শেয়ার কেলেংকারীর মত ব্যাংক কেলেংকারী ঘটে কিনা সে বিষয়ে অজানা আশংকা উকি দিচ্ছে।

বাংলাদেশের দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ঘটনা নতুন নয়। কিন্তু বর্তমান সময়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য অতীতের সব রের্কড ছাড়িয়ে গেছে। মধ্যবিত্ত ও নিন্মবিত্তের নাভিশ্বাস শুরু হয়েছে এ মূল্যবৃদ্ধির কারণে। এ মূল্যবৃদ্ধির নেপথ্যে রয়েছে কিছু সংখ্যক ব্যবসায়ী। যারা ম্যানেজ করছে কর্তাদের আর নাকের ডগায় মুলো ঝুলিয়ে রেখে কৃত্তিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়াচ্ছে নিত্যব্যবহার্য সামগ্রীর।

বাংলাদেশে বাড়ছে বেকারত্বের হার। কর্মসংস্থানের অভাব আজ বাড়িয়ে দিচ্ছে বেকারত্ব। প্রবাসেও শান্তিতে নেই প্রবাসীরা। দেশে প্রতিষ্ঠিত গার্মেন্টস শিল্প সহ বিভিন্ন শিল্প কারখানায় গ্যান্জাম লাগিয়ে তাও ধ্বংস করতে চেষ্টা করছে মির্জাফরের দল। নতুন কর্মসংস্থান সৃস্টি করা আজ বড়ই প্রয়োজন হয়ে দাড়িয়েছে।

বিদ্যুৎ এমন এক ম্যাজিকের নাম যেটা আজ আছে কাল নেই। এ এক লুকোচুরি খেলা। গ্যাসের অপব্যবহার এর ফলে গ্যাস সমস্যা সৃস্টি হতেও আর বেশি দেরি নেই।

প্রস্তাবনা:
১। ব্যাংকের সংখ্যা কমিয়ে আনতে হবে। বাংলাদেশে এত ব্যাংকের কোন প্রয়োজন নেই। যেগুলো থাকবে সেগুলোর শাখা এবং সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে। একই কথা প্রযোজ্য ইনসিউরেন্স কোম্পানীর ক্ষেত্রেও। এমএলএম কোম্পানীগুলো অর্থ লুটছে ফাকি দিয়ে। এরা কোন দ্রব্য বিক্রি ছাড়াই লুটছে। এম এল এম কোম্পানীর কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে। এনজিওগুলোর ক্ষুদ্র ঋণে সুদের হার কমাতে হবে। শেয়ার ব্যবসায় সরকারের আরো নিয়ন্ত্রন আনতে হবে। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ করতে হবে।

২। দ্রব্যমুল্য বৃদ্ধিতে রোধ করতে মনিটরিং সেল গঠন করতে হবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য আমদানীতে শুল্ক কমাতে হবে, রপ্তানী শুল্ক বাড়াতে হবে। আমদানী কারকদের এলসি খুলতে সুবিধা এবং পন্য খালাসে আরো গতিশীল ব্যবস্থা রাখতে হবে। কৃষকদের সার ও ডিজেলের সরবরাহ বৃদ্ধি এবং ভর্তুকি প্রদান করতে হবে এবং পন্য বাজারজাত করনের জন্যও পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে। এক্ষেত্রে পন্য মজুদের জন্য আধুনিক হিমাগার বাড়াতে হবে।


৩। দেশের শিল্পকারখানায় যাতে কোনধরণের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃস্টি না হয় সেদিকে শতভাগ দৃস্টি রাখতে হবে। শ্রমিকরা যাতে ন্যায্যবেতন পায় তাও নিশ্চিত করতে হবে। আবার উৎপাদিত সামগ্রী বিপণনেও সরকারকে ভূমিকা রাখতে হবে। দেশীয় শিল্প কারখানা বৃদ্ধি করতে হবে যাতে বিদেশ থেকে দ্রব্য আমদানীর চাপ কমানো যায়। ইপিজেড এর সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। দেশীয় শিল্পকারখানা গুলোকে জীবিত করতে হবে। বিদেশে প্রশিক্ষিত শ্রমিক প্রেরণ করতে হবে এবং প্রেরীত শ্রমিকরা চুক্তি অনুযায়ী ন্যায্য বেতন ও সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে কিনা কিংবা তাদের থেকে অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে ভিসা দিয়ে হচ্ছে কিনা সে ব্যাপারে সর্তক দৃস্টি রাখতে হবে।


৪। বাংলাদেশে গ্যাস বিতরণ ব্যবস্থা একেবারেই হাস্যকর। লাইনের মাধ্যমে যে গ্যাস দেয়া হয় তা আনলিমিটেড এবং দামও সস্তা। একচুল্লি তিনশটাকা, দুচুল্লি সম্ভবত সাড়ে চারশ টাকা। অথচ সিলিন্ডার গ্যাসের দাম নেয়া হচ্ছে অযৌক্তিক ভাবে বার-তেরশ টাকা। লাইনের গ্যাস যথেচ্ছা অপব্যবহার হচ্ছে। গোসলের পানি গরম করতে কিংবা কাপড় শুকাতেও কিংবা দেশলাইয়ের কাঠি বাচাতে গ্যাস জ্বালিয়ে রাখা হচ্ছে। লাইনের গ্যাস বিতরণ সিস্টেম বন্ধ করতে হবে। সিলিন্ডার গ্যাস এর দাম কমিয়ে এটি সহজ লভ্য করতে হবে। যেটা উন্নত বিশ্বে করা হয়। এতে করে গ্যাসের অপচয় রোধ হবে এবং সর্বপর্যায়ে গ্যাসের সরবরাহ সম্ভব হবে। কাফকোর মাধ্যমে যে হারে গ্যাস অপচয় হচ্ছে তা বাতুলতা মাত্র। এ চুক্তি বাতিল করতে হবে।

মাঝে মাঝে শুনতে পাই কচুরীপানা, পাথরকুচি কিংবা গোবর থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা। এসব প্রকল্প হাস্যকর এবং উদ্ভট। কিপরিমান কচুরীপানা, পাথরকুচি কিংবা গোবর প্রয়োজন বাংলাদেশের একদিনের বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব তা মনেহয় গবেষনার বাইরে রাখা হয়। এসব প্রকল্প বাদ দিয়ে পারমানবিক কিংবা তাপবিদুৎ কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে।

আমি কোন গবেষক কিংবা রাজনীতিবিদ নই। এসব আমার অনুর্বর মস্তিস্ক প্রসুত। তবে পাঠকের মতামত এর অপেক্ষায় রইলাম।

No comments:

Post a Comment

Pages (17)1234 Next