হালদা নদীতে আমরা যে শুশুকগুলো দেখতে পাই সেগুলো হচ্ছে এক ধরনের মিঠা পানির ডলফিন।
পৃথিবীতে আমাজন নদীতে থাকা ডলফিন ছাড়া আর সব মিঠা পানির ডলফিন (সাউথ ইন্ডিয়ান রিভার ডলফিন) ভারতীয় উপমহাদেশে বাস করে। উপমহাদেশে দুই প্রকার রিভার ডলফিন পাওয়া যায়। গাঙ্গেজ ডলফিন আর ইরাবতি ডলফিন। ১৯৭০ সাল পর্যন্ত এদের দুই প্রকারকেই একটা স্পিসিস হিসাবে দেখা হত। পরে বিজ্ঞানীরা এ দুটো প্রজাতিকে আলাদা করেন।
Labels
- জিয়া চৌধুরী'র কবিতা (40)
- আড্ডাবাজি (11)
- তথ্য-প্রযুক্তি (8)
- গল্প-কবিতা (7)
- বাংলার পথে (5)
- জন্মযুদ্ধ (4)
- নিবন্ধ/অনুবাদ (3)
Showing posts with label বাংলার পথে. Show all posts
Showing posts with label বাংলার পথে. Show all posts
Saturday, 6 January 2018
Sunday, 20 September 2015
ভারতের গরু আমদানী বন্ধ করা উচিত
ভারত আমাদের গরু দেবেনা বলে আবার গরু দিচ্ছে। এটা আমাদের গবাদী পশুর খামার ধ্বংসের একটা চক্রান্ত।
কিভাবে?
ভারত গরু রপ্তানী না করার ঘোষণা দেয়ায় আমাদের দেশের খামারীরা পর্যাপ্ত পরিমান গরু মজুদ করেছে। এবার কিছুটা সংকট থাকলেও আগামী বছর হতে আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে রাখলে সেই সংকটও থাকবেনা।
Wednesday, 21 November 2012
বাংলার মাছ, ছবি ব্লগ।
মাছে ভাতে বাঙ্গালী......এই কথাটা বর্তমান প্রেক্ষাপটে কতটা বাস্তব এটা বিচারের দ্বায়িত্ব পাঠকদের। এক সময় বাংলার প্রতিটি জলাশয়(হাওর, বাউর, বিল, খাল, নদী পুকুর ইত্যাদি) ছিল হরেক রকম মাছে ভরপুর। এখন মাছের প্রাপ্যতা আর আগের মতো নেই। আমাদের আগের প্রজন্ম যেসব মাছ দেখেছে সেগুলোর কিছু কিছু আমাদের জন্য বিরল হয়ে গেছে। আমাদের পরের প্রজন্মকে হয়ত ছবি দেখিয়ে বলতে হবে এই মাছটা আমাদের দেশে ছিল, এটার নাম......ইত্যাদি ইত্যাদি।
এই পোষ্টে আমি বাংলাদেশে পাওয়া যায় বা যেত এরকম সব(প্রায়!)মাছ গুলোকে এক করার চেষ্টা করেছি। যদি কিছু বাকি থাকে আপনাদের সাহায্যে পূরণ করা হবে। একেক মাছ একেক এলাকায় ভিন্ন নামে পরিচিত। এখানে হয়তো আপনাদের মাধ্যমে তাও জানা যাবে। নতুন প্রজন্মকে মাছ সম্পর্কে ধারনা দিতে এই পোষ্ট আশা করি কাজে দিবে!! আর যারা মাছ খেতে ভালোবাসি তাদের জন্য ক্ষিধা বাড়াতে সাহায্য করবে!!
চলুন তাহলে দেখে নেই আমাদের দেশি মাছ গুলো---------
Saturday, 21 January 2012
চিরদিনের জন্য ভারতীয় পণ্য বর্জন কর্মসূচি * আজ থেকে সচেতন ভাবে চিরদিনের জন্য ভারতীয় পণ্য বর্জন করুন...
বাংলাদেশ সীমান্তে ইন্ডিয়ান আগ্রাসন এবং ভারতীয় সীমান্ত বাহিনী BSF কর্তৃক অব্যহত বাংলাদেশী হত্যা ও নির্যাতনের প্রতিবাদের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ইন্ডিয়ান পণ্য বর্জন কর...্মসুচি প্রদান করা হল। ইন্ডিয়ান পণ্য বর্জন করে প্রমান করুন আপনি কতটা দেশপ্রেমিক।
((বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য ইন্ডিয়ান পণ্য তালিকা))
> এয়ারটেল (Airtel) [আপনার Airtel sim টা ফেলে দিন, আপনার নিশ্চয়ই আরও sim আছে]
> Lays chips, Kurkure chips [Lays এর বিকল্প বাংলাদেশি Sun chips, একই স্বাদ, দাম কম]
> Cadbury, Chlormint, Alpenliebe, centerfresh, mentos, air action, chocolate [বাংলাদেশি অনেক মানসম্মত চকলেট আছে, chocolate কেনার আগে পেছনে দেখে নেবেন দেশি company’র নাম]
> Hajmola, Dabur products [হাজমলা, ডাবুর চবনপ্রাস, ডাবুরের সব পণ্য]
> Parle G এবং অন্যান্য ভারতীয় বিস্কুট। [বাংলাদেশি biscuit এর মান ওদের চেয়ে অনেক ভালো!]
> Micromax, Hitech, Karbonn, Lava মোবাইল সেট।
> Maruti, Swaraz Mazda, Tata, Hindustan গাড়ি ও ট্রাক। [আমরা তো জাপানিতেই অভ্যস্ত, এখন ভারতীয় গুলো না কিনলেই চলে]
> Bajaj pulsar, TVS, Hero Honda, Yamaha (India Made) [দেশি Walton একদম খারাপ না]
> Videocon, Whirlpool (India Made) [দেশি Walton কিনুন, অথবা ভারতীয় ছাড়া অন্য Brand কিনুন]
> Titan ঘড়ি [অনেক সমমানের ঘড়ি বাজারে আছে এরচেয়ে কম দামে!]
> VLCE, Dermo viva, Chic, Veet, Vatika (Dabur), Medimix, Set Wet, Softee, Himalaya, Garnier, Lakme (লাকমে) কসমেটিকস, ফেসওয়াশ, মেকাপ আইটেম ও ক্রিম. [দেশি ব্র্যান্ড এর গুলো খুঁজে নিন, square, cute, keya, kohinoor এর মানসম্মত দেশি কসমেটিকস আছে, কসমেটিকসের ক্ষেত্রে ভারতীয়র বদলে থাইল্যান্ডের টা খুঁজে নিন]
> Colgate (India Made), Meswak, Dabur Red, Active টুথপেস্ট [দেশি টুথপেস্ট অনেক ভালো]
> Jatak, Set wet, Wild Rain deodorant spray (পারফিউম ও স্প্রে)
> Cello, Montex, Nataraj, Camel পেন্সিল, রঙপেন্সিল, কলম, রঙ।
> Whisper toiletries.
> Asian Paint, Fevicol. (বিকল্প অনেক রঙ আছে বাজারে)
> Raymond ফেব্রিক ও টেইলর.
> সবরকম Dabur (ডাবর), Godrej (গোদরেজ) ও Amul (অমল) পণ্য।
> Birla Ultratech Cement বিড়লা আলট্রাটেক সিমেন্ট ও বিড়লার সব পণ্য [আমাদের দেশি সিমেন্ট বিদেশে রফতানি হয়! ওদেরটা কেন কিনবেন?]
> Ujala (ঊজালা), হুইল (Wheel) সাবান, নীল ও Detergent (এদের চেয়ে উন্নত দেশীয় অনেক পণ্য আছে)
> দোকানে পেঁয়াজ, রশুন, ডাল কেনার সময় ইন্ডিয়ান এর পরিবর্তে অন্যটা খুঁজবেন। [হয়ত এখনি ভাল বিকল্প পাবেন না তবে চেষ্টা করতে থাকলে আমাদের নিজেদেরই স্বয়ংসম্পূর্ণতা আসবে]
> Soffola gold সয়াবিন তেল, Dalda বনস্পতি [অন্য অনেক সয়াবিন তেল ও বনস্পতি তেল আছে বাজারে]
> Parachute নারিকেল তেল [জুই, লালবাগ এইসব নারিকেল তেল ব্যবহার করুন। একজন কেমিস্ট আমাকে বলেছে Parachute নারিকেল তেলে সবচেয়ে বেশি artificial কেমিকেল থাকে]
> Hero, Atlas সহ অন্যান্য ভারতীয় সাইকেল ও ভারতীয় সাইকেল পার্টস। [বিকল্প আছে বাজারে]
> Hawkins, Prestige প্রেসার কুকার ও ক্রোকারিজ [বাংলাদেশি কিয়াম Kiam ব্যবহার করুন, মান ভাল দামও কম]
> Archies greetings card [এখন আজাদ, আইডিয়াল এদের ভাল কার্ড পাওয়া যায়, একটু খুঁজে নিন]
> Arvind, Raid & Tailors ভারতে তৈরি সার্ট, প্যান্ট ও সুট এর কাপড় [বাজারে আমাদের নিজস্ব অল্প কিছু কাপড় আছে তবে কোরিয়ান সহ আরও অনেক ব্র্যান্ড পাওয়া যায়]
> সানন্দা, আনন্দলোক (ভারতীয়), stardust সহ অন্যান্য ভারতীয় বিনোদন ম্যাগাজিন (internet এর যুগে কি আসলেই ওদের পত্রিকা কিনে পড়ার দরকার আছে?)
> ভারতীয় শাড়ি ও অন্যান্য জামা [শাড়ি কেনার জন্য দেশিটা বেছে নিন... প্রাইড, জনি প্রিন্ট সহ আরও অনেক উন্নত মানের শাড়ির আছে, এছাড়া মিরপুরের কাতান, জামদানি এদের উপরে ভালো শাড়ি ভারতেও কম হয়]
> Starplus, Zee, Sahara সহ সব ভারতীয় Channel
[এইসব Channel এ Parental Lock দিয়ে রাখুন, বিশ্বাস করুন, এই Channel গুলো না দেখলে ভারতীয় পন্যের প্রতি আপনার আকর্ষণ আপনাআপনি অর্ধেক হয়ে যাবে!]
ঐক্যবদ্ধ চিন্তাধারার দিকে এগিয়ে আসুন । দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্যের প্রশ্নে কোন দ্বিধা নয় - সংকোচ নয়!
Tuesday, 3 January 2012
জেগে ওঠো মানুষ, বেঁচে উঠুক তিতাস
মাথার উপর বিস্তীর্ণ নীল আকাশ, চোখ ধাঁধানো রোদ নতুন পথ ধরে হেঁটে আসছে একটি কিশোর। এখনো পুরোপুরি কিশোর বলা যায়না তাকে, সবে ক্লাস সিক্সে উঠেছে। ক্লাস রোল ৫২, একটু অস্বস্তির সাথেই বলেছিল সে। স্থানীয় কেজি স্কুলে পঞ্চম শ্রেণীতে রোল ১ নিয়েই বার্ষিক পরীক্ষা শেষ করেছিল, রেজাল্ট বের হলে আসল রোল জানা যাবে সেটা মনে করিয়ে দিতে ভুল করল না। নতুন বইয়ের ঘ্রাণের জন্য আঁকুপাঁকু করছে মন। বড় হয়ে ক্রিকেটার হবে এটাই স্বপ্ন, নামকরা অলরাউন্ডার। ধানকাটার মৌসুম শেষে জমিতেই পিচ বানিয়ে বন্ধুদের সাথে ক্রিকেট, নদীতে সাঁতার আর মাছ ধরা এই নিয়ে তার জীবন। এই কিশোর এখনো জানেনা তার জীবনের প্রধান তিনটি স্বপ্ন আর আনন্দের মধ্যে দুটি, এখনি হুমকির সম্মুক্ষীণ। অলরাউন্ডার হবার স্বপ্নকে সে বয়ে নিয়ে যেতে পারবে কিনা সেটিও অনিশ্চিত।
পথের মাঝে স্কুলফেরা কিশোর
তিতাস নামক প্রাণবন্ত এক তরুণী নদীর কাছে যখন আমরা পৌছলাম তখন শুক্রবারের জুম্মার নামায শুরু হতে আর খুব বেশি সময় বাকী নেই। শীতকাল অনুযায়ী বেমানান খটখটে রোদ। ব্লগারদের জনা পাচেকের আরেকটি দল সুলতানপুর পার করছেন। এখানে চলে আসতে খুব বেশি দেরী হবে না। যে রাস্তা ধরে আমাদের গাড়ীটি এগিয়ে চলেছিল তাতে যুগ্ম ব্রীজ পার হলেই আখাউড়া পৌরসভা শুরু। স্থানীয়ভাবে এই ব্রীজকে কড্ডা ব্রীজ হিসেবেই ডাকা হয়।
আখাউড়া থেকে ব্রাম্ননবাড়ীয়ার পথ
খুব কাছেই দেখা গেল বিমান নামছে। প্রথমে বিস্মিত হলেও পরক্ষণেই বোঝা গেল বাংলাদেশ-ভারতীয় সীমান্তের খুব কাছাকাছি চলে এসেছি আমরা। সীমান্তের ওপাড়েই আগরতলা। বাংলাদেশের জন্ম ইতিহাসের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত একটি নাম। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, জাতীয় নেতা এইসব ঘটনার কথা মনের ভেতর উঁকি দিয়ে গেল। সাথের বন্ধুরা সীমান্ত দেখার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠল, আর তখনি হঠাৎ করেই মনের ভেতর দাবানলের মত জ্বলে উঠল একটি ছবি। যে ছবিতে দেখা যায় কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলন্ত ফেলানির লাশ। বিএসএফ বহন করে নিয়ে যাচ্ছে সেই লাশ কোরবানীর পশুর মত।
কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলছে ফেলানি
তিতাসের খুন হবার খবর আমরা পাই এই ব্লগেই, দিনমজুরের পোষ্টের সূত্রে।(খবরটি প্রথম জানিয়েছিলেন ক্যাপ্টেন০৫ )। সেই খবর আমাদের কষ্ট দেয়, বিদ্রোহী করে। কিন্তু লাশের গল্প শোনা আর লাশ ছুঁয়ে আসা এক কথা নয়। তাই ব্লগাররা নিজেদের উদ্যোগে নিজেরাই আয়োজন করে রওনা দেন তিতাসের লাশ দেখার উদ্দেশ্যে। কৌশিক, সবাক, হাসান বিপুল, ইশতিয়াক করিম, তারেক আজিজ এই পাঁচের ব্লগারের দল পৌছান একসাথে। আমি ও আমার বন্ধুরা অলোক, রমিন, রেদোয়ান পৌছাই তাদের একটু আগে। ব্রাম্মনবাড়ীয়া ২৪ নামে একটা নিউজ এজেন্সীর কর্তাব্যক্তিরা আমাদের নানাভাবে সাহায্য করেন।
তিতাসের বুক চিড়ে ট্রানজিট
আমরা দেখি নদীর বুক চিড়ে রাস্তা বানানো হয়েছে। ট্রানজিটের রাস্তা। আমাদের নতজানুতার পথ। এই পথ দেখে আমাদের কষ্ট হয়, ঘৃণা হয়, অবিশ্বাস গাঢ় হয় সরকারের বিবেচনা বোধ আর সদিচ্ছার প্রতি। সন্দেহ দৃঢ় হয় সরকারের মেরুদন্ডহীনতা আর দুর্নীতিতে। ঠিক যেভাবে প্রেস ক্লাবের সামনে সাংবাদিকের পায়ের উপর দিয়ে নির্মম চলে যায় যন্ত্রযান, যেভাবে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয় তার পা শরীর থেকে, ঠিক সেভাবে তিতাসের দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে তার প্রবাহমানতাকে।
তবুও এই শীতকালেও বাঁচার আকুতিতে প্রাণোচ্ছল তিতাস
ছোটবেলায় পড়েছিলাম নদীমাতৃক দেশ এই বাংলাদেশ। সেটা কি এরপর পাঠ্যপুস্তকেই রয়ে যাবে? কি দেখবে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম! বিশ্বের বৃহত্তম এই ব-দ্বীপে শিরা উপশিরার মত বয়ে চলে নদী-নালা-খাল। একটি নদীর উপর নির্ভর করে লাখলাখ মানুষ। বেঁচে থাকে চারপাশের প্রকৃতি-বাস্তুসংস্থান। ফলে একটি নদী কেবল বিশেষ একটি অঞ্চলের সম্পত্তি নয় সেটি সমগ্র দেশের, দেশের মানুষের সম্পদ। নদীর প্রবাহমানতায় একক এক্তিয়ার নেই কারোই। তাই যখন তখন যেখানে সেখানে বাঁধ দেয়া যায়না। উজান ভাটির মানুষের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে হয়। এই সম্পদ কারো একার নয়, এই সম্পদ সমগ্র পৃথিবীর। সারা পৃথিবী ব্যাপী যখন পরিবেশ রক্ষা প্রধানতম বিষয় তখন ক্ষুদ্র স্বার্থপর স্বার্থে সেখানে বাধ সেধেছে নব্য বা পুরাতন শিল্পভিত্তিক রাষ্ট্র। ভারত তাদের অন্যতম।
নদী হত্যা হলে মাছের ব্রিডিং কোথায় হবে?
পরিবেশ বিনষ্টকারী “উন্নয়ন” যে কেবল নামেরই উন্নয়ন তার প্রমাণ হিসেবে এখনো কয়লার মত জ্বলজ্বল করছে লেসোথো, চিলি, উগান্ডা, পাপুয়া নিউগিনি আরো কতশত দেশ। ফলে তিতাসের বুকে রাস্তা বানানো সেই একই হত্যা-তালিকায় আর একটি নামমাত্র। আর এতে আক্রান্ত হবেন লাখো লাখো মানুষ।
স্থানীয় মানুষজনদের সাথে ইন্টারভিউ করে জানা গেল মাত্র ছ-মাস আগে এই রাস্তা তৈরি হয়েছে। স্থানীয় লোকজনের সাথে কোন ধরণের সংলাপ বা তাদের মতামতের অন্তর্ভূক্তির কোন সুযোগই ঘটেনি। আখাউড়ার ব্লগার আলী মাহমেদ শুভ জানালেন ট্রানজিট শুরু হবার সাথেই এলাকার জমির দাম বেড়ে গেছে বহুগুন। অনেকেই জমির দাম বেড়ে যাওয়া নিয়ে আশাবাদী। কেননা তারা মনে করেন তাহলে স্থানীয় মানুষজনের অর্থনীতিতে এটা একটা “বুম” হিসেবে কাজ করবে। কিন্তু জমির দাম বেড়ে যাওয়ায় অর্থনৈতিক লাভ হবে কাদের? ক্ষেতিজমির মূল মালিকদের নাকি মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের? নাকি স্থানীয় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক এলিটদের? এই ধানি জমি বিক্রী হবে কাদের কাছে? শিল্পপতি ইট ভাঁটার মালিকদের কাছে? তারা কি বানাবেন? কলকারখানা? কিসের বিনিময়ে? ধানের জমি, সেচের নদী, মাছের নদীর বিনিময়ে? তাহলে এই নদীর সাথে জড়িত বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মানুষজনের জীবনের কি হবে?
বর্ষায় ভ’রে ওঠে এই জমিগুলো। নদী হত্যা হলে চাষবাষের কি হবে?
এই কৃষকের কি হবে? কালো পিচে কি আর ফসল ফলানো যায়?
এই শ্রমিকের কি হবে? কিংবা জেলের? কিংবা ফসলের?
এই ধরণের প্রশ্নগুলো সাধারণত এড়িয়ে যেতে চান আমলা,মন্ত্রী,এমপিরা। এলাকার উন্নয়নের নামে তারা বিসর্জন দেন শতশত মানুষের ন্যুনতম বেঁচে থাকার অধিকার। ব্রাম্মণবাড়ীয়া থেকে আখাউড়া যাবার পথে চোখে পড়ল সদ্য তৈরি হওয়া নতুন পথ। এতটাই আঁকাবাঁকা যে আমাদের গাড়ী চালিয়ে যেতে বেশ কষ্ট হল। যদি এমন বলা হয় “বন্ধু দেশের”???!!! এত বড় ভারী ভারী লরি নেবার জন্য তিতাসের বুক চিড়ে পথ বানানো হয়েছে কেননা বিকল্প ব্রীজের এমন ভার বহনের ক্ষমতা নেই। তাহলে আমি বলব আসলে সমগ্র বাংলাদেশেরই এই ভারতীয় ট্রানজিট বহনের ক্ষমতা নেই। কেননা পুরো রাস্তাকে যেভাবে পরিমার্জন করা হয়েছে টাকা খরচ করা হয়েছে, সেই ধৈর্য্য আর অর্থব্যায় ব্রীজের পুন:গঠনে দেয়া হল না কেন? কিসের এত তাড়া কিসের ভয়ে এত হুটোপুটি করে ট্রানজিট ট্রানজিট করে মাতম করতে হবে?
ট্রানজিটের ভারতীয় বন্ধুত্বের ভার বহনের ক্ষমতা কি আমাদের আছে?
কতদূরে উন্নয়ন?
মালামাল বহনের অন্য কোন রাস্তা ছিলনা? কেন ট্রানজিটের এত তাড়াহুড়ো?
এই হল দেশের উন্নয়নের অবস্থা
যাবার পথেই চোখে পড়েছিল, দিন মজুরের পোষ্টে যেই সংস্কারহীন অযত্নে লালিত ব্রীজের কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেটারই রেলিং ভেঙ্গে উল্টে পড়ে থেতলে গেছে ট্রাক। ঠিক তেমনি হবে এই দেশের যদিনা নিজের ঘরের পথ ঘাট উন্নয়নে মনোনিবেশ না করা হয়। যদি নির্দ্বিধায় গলা টিপে মেরে ফেলি নিজের সম্পদকে। অন্যরাষ্ট্র আর নিজের দেশের কতিপয় দালালের পকেট ভারী হওয়া ছাড়া আর কিছুই হবে না।
আর এই তার ফলাফল
ধানি জমির অনি:শেষ বিলুপ্তি, একের পর এক নদীকে হত্যা করা, কৃষকের কাছ থেকে তার জীবন কেড়ে নেয়া এর সবই ফিরে আসছে বুমেরাং হিসেবে। জ্বালানী আর তেলের মূল্য যেমন অবিশ্বাস্য উর্দ্ধগতির তা পরাস্ত করছে মানুষের ন্যুনতম বেঁচে থাকার চেষ্টাকে। এদেশের ০.১% মানুষ নাহয় ৩০০০টাকা দিয়ে তেল আর ২০০০টাকার চাল খেতে কিনে খেতে পারে কিন্তু বাকীদের বেঁচে থাকাই যে এক যন্ত্রণা। সেই ০.১% মানুষ নাহয় উড়াল দিয়ে উড়ে যেতে পারে ইউরোপ আমেরিকা আর মরিশাসে। কিন্তু বাকী আমাদের থাকতে হবে এই দেশে। কেননা আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ দেখি এই দেশেই, এই রাষ্ট্রেই।
এই সাধারণ মানুষের হাতই টেনে তোলে রাস্ট্রকে বারবার আর রাস্ট্র তার গলাতেই শেকল পড়ায়
স্থানীয় অনেক মানুষজন চাষের জমি তো হারাচ্ছেনই। হারাচ্ছেন সেচের পানিও। আখাউড়া থেকে আশুগঞ্জ পর্যন্ত বাঁধ আর কালভার্ট বানিয়ে কত বিস্তীর্ণ একটা অঞ্চলের মানুষজন আক্রান্ত হয়েছেন সে কথা কি ভেবে দেখেছেন আমাদের (অপ-)নীতি নির্ধারকরা?
সময় এসেছে পরিবর্তনের, শহুরে ব্লগিং করা মানুষজনেরও দু-বেলা ঠিকটাক ভাত আর স্বস্তির জীবনের জন্য রক্ষা করতে হবে নামতে হবে দেশের সম্পদকে। প্রতিরোধ করতে হবে সব অন্যায় সিদ্ধান্ত আর নতজানু নীতির।
ব্লগারদের সাথে আলাপে অনেকেই শংকা প্রকাশ করেছিলেন যে স্থানীয় রাজনীতি আর দারিদ্রের কারণে হয়ত অনেককেই সংগঠিত করা সম্ভব হবে না। হয়ত তাদের আশংকা অনেকটা সত্যও। কিন্তু এও সত্য এই মুহুর্তে প্রতিবাদ প্রতিরোধ ছাড়া আর কোন পথ নেই। ব্লগাররা কাজ করতে পারেন স্থানীয় অপনিয়ন লিডার হিসেবে। কেবল রাজধানী-কেন্দ্রীক আন্দোলনের বদলে আমরা এমনও দেখতে পারি যে ব্রাম্মণবাড়ীয়া, আশুগঞ্জের ব্লগাররা প্রতিবাদ জানিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসনকে। অবহিত করেছেন স্থানীয় মানুষদের। সংগঠিত করেছেন। এটা আমাদের করতেই হবে, কেননা শেষমেশ ক্ষতিগ্রস্থ হবার জায়গায় রয়েছি সেই ৯৯.৯%।
সেই কিশোর ছুঁইছুঁই মুখটার কথা ভুলতে পারিনা কিছুতেই। দু:স্বপ্ন দেখি “বন্ধু” দেশের ট্রানজিট লরিতে পিষ্ট হয়ে থেতলে গেছে তার সমস্ত দেহ। খুব কাছের তিতাসের মত সেও মুখ থুবড়ে পড়ে আছে আর নিচ্ছে রক্তাক্ত শেষ নি:শ্বাস। আর ধূসর হয়ে আসছে তার নদীতে সাঁতার, মাছ, ক্রিকেট...।
এই কিশোরটিকে বাঁচাতে হবে, নিহত হওয়া থেকে, বিষণ্ন হয়ে স্বপ্নহীন হওয়া থেকে। তিতাসকে বাঁচানো সম্ভব। বাঁচানো সম্ভব এই দেশটাকে। দূর কর, প্রতিরোধ কর ট্রানজিট আর টিপাইমুখের কালো ছায়া।
ট্রানজিটের মালামাল পরিবহণের নামে তিতাস নদী খুন হতে পারে না, আমরা তিতাস নদী বাঁচাবই
পথের মাঝে স্কুলফেরা কিশোর
তিতাস নামক প্রাণবন্ত এক তরুণী নদীর কাছে যখন আমরা পৌছলাম তখন শুক্রবারের জুম্মার নামায শুরু হতে আর খুব বেশি সময় বাকী নেই। শীতকাল অনুযায়ী বেমানান খটখটে রোদ। ব্লগারদের জনা পাচেকের আরেকটি দল সুলতানপুর পার করছেন। এখানে চলে আসতে খুব বেশি দেরী হবে না। যে রাস্তা ধরে আমাদের গাড়ীটি এগিয়ে চলেছিল তাতে যুগ্ম ব্রীজ পার হলেই আখাউড়া পৌরসভা শুরু। স্থানীয়ভাবে এই ব্রীজকে কড্ডা ব্রীজ হিসেবেই ডাকা হয়।
আখাউড়া থেকে ব্রাম্ননবাড়ীয়ার পথ
খুব কাছেই দেখা গেল বিমান নামছে। প্রথমে বিস্মিত হলেও পরক্ষণেই বোঝা গেল বাংলাদেশ-ভারতীয় সীমান্তের খুব কাছাকাছি চলে এসেছি আমরা। সীমান্তের ওপাড়েই আগরতলা। বাংলাদেশের জন্ম ইতিহাসের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত একটি নাম। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, জাতীয় নেতা এইসব ঘটনার কথা মনের ভেতর উঁকি দিয়ে গেল। সাথের বন্ধুরা সীমান্ত দেখার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠল, আর তখনি হঠাৎ করেই মনের ভেতর দাবানলের মত জ্বলে উঠল একটি ছবি। যে ছবিতে দেখা যায় কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলন্ত ফেলানির লাশ। বিএসএফ বহন করে নিয়ে যাচ্ছে সেই লাশ কোরবানীর পশুর মত।
কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলছে ফেলানি
তিতাসের খুন হবার খবর আমরা পাই এই ব্লগেই, দিনমজুরের পোষ্টের সূত্রে।(খবরটি প্রথম জানিয়েছিলেন ক্যাপ্টেন০৫ )। সেই খবর আমাদের কষ্ট দেয়, বিদ্রোহী করে। কিন্তু লাশের গল্প শোনা আর লাশ ছুঁয়ে আসা এক কথা নয়। তাই ব্লগাররা নিজেদের উদ্যোগে নিজেরাই আয়োজন করে রওনা দেন তিতাসের লাশ দেখার উদ্দেশ্যে। কৌশিক, সবাক, হাসান বিপুল, ইশতিয়াক করিম, তারেক আজিজ এই পাঁচের ব্লগারের দল পৌছান একসাথে। আমি ও আমার বন্ধুরা অলোক, রমিন, রেদোয়ান পৌছাই তাদের একটু আগে। ব্রাম্মনবাড়ীয়া ২৪ নামে একটা নিউজ এজেন্সীর কর্তাব্যক্তিরা আমাদের নানাভাবে সাহায্য করেন।
তিতাসের বুক চিড়ে ট্রানজিট
আমরা দেখি নদীর বুক চিড়ে রাস্তা বানানো হয়েছে। ট্রানজিটের রাস্তা। আমাদের নতজানুতার পথ। এই পথ দেখে আমাদের কষ্ট হয়, ঘৃণা হয়, অবিশ্বাস গাঢ় হয় সরকারের বিবেচনা বোধ আর সদিচ্ছার প্রতি। সন্দেহ দৃঢ় হয় সরকারের মেরুদন্ডহীনতা আর দুর্নীতিতে। ঠিক যেভাবে প্রেস ক্লাবের সামনে সাংবাদিকের পায়ের উপর দিয়ে নির্মম চলে যায় যন্ত্রযান, যেভাবে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয় তার পা শরীর থেকে, ঠিক সেভাবে তিতাসের দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে তার প্রবাহমানতাকে।
তবুও এই শীতকালেও বাঁচার আকুতিতে প্রাণোচ্ছল তিতাস
ছোটবেলায় পড়েছিলাম নদীমাতৃক দেশ এই বাংলাদেশ। সেটা কি এরপর পাঠ্যপুস্তকেই রয়ে যাবে? কি দেখবে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম! বিশ্বের বৃহত্তম এই ব-দ্বীপে শিরা উপশিরার মত বয়ে চলে নদী-নালা-খাল। একটি নদীর উপর নির্ভর করে লাখলাখ মানুষ। বেঁচে থাকে চারপাশের প্রকৃতি-বাস্তুসংস্থান। ফলে একটি নদী কেবল বিশেষ একটি অঞ্চলের সম্পত্তি নয় সেটি সমগ্র দেশের, দেশের মানুষের সম্পদ। নদীর প্রবাহমানতায় একক এক্তিয়ার নেই কারোই। তাই যখন তখন যেখানে সেখানে বাঁধ দেয়া যায়না। উজান ভাটির মানুষের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে হয়। এই সম্পদ কারো একার নয়, এই সম্পদ সমগ্র পৃথিবীর। সারা পৃথিবী ব্যাপী যখন পরিবেশ রক্ষা প্রধানতম বিষয় তখন ক্ষুদ্র স্বার্থপর স্বার্থে সেখানে বাধ সেধেছে নব্য বা পুরাতন শিল্পভিত্তিক রাষ্ট্র। ভারত তাদের অন্যতম।
নদী হত্যা হলে মাছের ব্রিডিং কোথায় হবে?
পরিবেশ বিনষ্টকারী “উন্নয়ন” যে কেবল নামেরই উন্নয়ন তার প্রমাণ হিসেবে এখনো কয়লার মত জ্বলজ্বল করছে লেসোথো, চিলি, উগান্ডা, পাপুয়া নিউগিনি আরো কতশত দেশ। ফলে তিতাসের বুকে রাস্তা বানানো সেই একই হত্যা-তালিকায় আর একটি নামমাত্র। আর এতে আক্রান্ত হবেন লাখো লাখো মানুষ।
স্থানীয় মানুষজনদের সাথে ইন্টারভিউ করে জানা গেল মাত্র ছ-মাস আগে এই রাস্তা তৈরি হয়েছে। স্থানীয় লোকজনের সাথে কোন ধরণের সংলাপ বা তাদের মতামতের অন্তর্ভূক্তির কোন সুযোগই ঘটেনি। আখাউড়ার ব্লগার আলী মাহমেদ শুভ জানালেন ট্রানজিট শুরু হবার সাথেই এলাকার জমির দাম বেড়ে গেছে বহুগুন। অনেকেই জমির দাম বেড়ে যাওয়া নিয়ে আশাবাদী। কেননা তারা মনে করেন তাহলে স্থানীয় মানুষজনের অর্থনীতিতে এটা একটা “বুম” হিসেবে কাজ করবে। কিন্তু জমির দাম বেড়ে যাওয়ায় অর্থনৈতিক লাভ হবে কাদের? ক্ষেতিজমির মূল মালিকদের নাকি মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের? নাকি স্থানীয় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক এলিটদের? এই ধানি জমি বিক্রী হবে কাদের কাছে? শিল্পপতি ইট ভাঁটার মালিকদের কাছে? তারা কি বানাবেন? কলকারখানা? কিসের বিনিময়ে? ধানের জমি, সেচের নদী, মাছের নদীর বিনিময়ে? তাহলে এই নদীর সাথে জড়িত বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মানুষজনের জীবনের কি হবে?
বর্ষায় ভ’রে ওঠে এই জমিগুলো। নদী হত্যা হলে চাষবাষের কি হবে?
এই কৃষকের কি হবে? কালো পিচে কি আর ফসল ফলানো যায়?
এই শ্রমিকের কি হবে? কিংবা জেলের? কিংবা ফসলের?
এই ধরণের প্রশ্নগুলো সাধারণত এড়িয়ে যেতে চান আমলা,মন্ত্রী,এমপিরা। এলাকার উন্নয়নের নামে তারা বিসর্জন দেন শতশত মানুষের ন্যুনতম বেঁচে থাকার অধিকার। ব্রাম্মণবাড়ীয়া থেকে আখাউড়া যাবার পথে চোখে পড়ল সদ্য তৈরি হওয়া নতুন পথ। এতটাই আঁকাবাঁকা যে আমাদের গাড়ী চালিয়ে যেতে বেশ কষ্ট হল। যদি এমন বলা হয় “বন্ধু দেশের”???!!! এত বড় ভারী ভারী লরি নেবার জন্য তিতাসের বুক চিড়ে পথ বানানো হয়েছে কেননা বিকল্প ব্রীজের এমন ভার বহনের ক্ষমতা নেই। তাহলে আমি বলব আসলে সমগ্র বাংলাদেশেরই এই ভারতীয় ট্রানজিট বহনের ক্ষমতা নেই। কেননা পুরো রাস্তাকে যেভাবে পরিমার্জন করা হয়েছে টাকা খরচ করা হয়েছে, সেই ধৈর্য্য আর অর্থব্যায় ব্রীজের পুন:গঠনে দেয়া হল না কেন? কিসের এত তাড়া কিসের ভয়ে এত হুটোপুটি করে ট্রানজিট ট্রানজিট করে মাতম করতে হবে?
ট্রানজিটের ভারতীয় বন্ধুত্বের ভার বহনের ক্ষমতা কি আমাদের আছে?
কতদূরে উন্নয়ন?
মালামাল বহনের অন্য কোন রাস্তা ছিলনা? কেন ট্রানজিটের এত তাড়াহুড়ো?
এই হল দেশের উন্নয়নের অবস্থা
যাবার পথেই চোখে পড়েছিল, দিন মজুরের পোষ্টে যেই সংস্কারহীন অযত্নে লালিত ব্রীজের কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেটারই রেলিং ভেঙ্গে উল্টে পড়ে থেতলে গেছে ট্রাক। ঠিক তেমনি হবে এই দেশের যদিনা নিজের ঘরের পথ ঘাট উন্নয়নে মনোনিবেশ না করা হয়। যদি নির্দ্বিধায় গলা টিপে মেরে ফেলি নিজের সম্পদকে। অন্যরাষ্ট্র আর নিজের দেশের কতিপয় দালালের পকেট ভারী হওয়া ছাড়া আর কিছুই হবে না।
আর এই তার ফলাফল
ধানি জমির অনি:শেষ বিলুপ্তি, একের পর এক নদীকে হত্যা করা, কৃষকের কাছ থেকে তার জীবন কেড়ে নেয়া এর সবই ফিরে আসছে বুমেরাং হিসেবে। জ্বালানী আর তেলের মূল্য যেমন অবিশ্বাস্য উর্দ্ধগতির তা পরাস্ত করছে মানুষের ন্যুনতম বেঁচে থাকার চেষ্টাকে। এদেশের ০.১% মানুষ নাহয় ৩০০০টাকা দিয়ে তেল আর ২০০০টাকার চাল খেতে কিনে খেতে পারে কিন্তু বাকীদের বেঁচে থাকাই যে এক যন্ত্রণা। সেই ০.১% মানুষ নাহয় উড়াল দিয়ে উড়ে যেতে পারে ইউরোপ আমেরিকা আর মরিশাসে। কিন্তু বাকী আমাদের থাকতে হবে এই দেশে। কেননা আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ দেখি এই দেশেই, এই রাষ্ট্রেই।
এই সাধারণ মানুষের হাতই টেনে তোলে রাস্ট্রকে বারবার আর রাস্ট্র তার গলাতেই শেকল পড়ায়
স্থানীয় অনেক মানুষজন চাষের জমি তো হারাচ্ছেনই। হারাচ্ছেন সেচের পানিও। আখাউড়া থেকে আশুগঞ্জ পর্যন্ত বাঁধ আর কালভার্ট বানিয়ে কত বিস্তীর্ণ একটা অঞ্চলের মানুষজন আক্রান্ত হয়েছেন সে কথা কি ভেবে দেখেছেন আমাদের (অপ-)নীতি নির্ধারকরা?
সময় এসেছে পরিবর্তনের, শহুরে ব্লগিং করা মানুষজনেরও দু-বেলা ঠিকটাক ভাত আর স্বস্তির জীবনের জন্য রক্ষা করতে হবে নামতে হবে দেশের সম্পদকে। প্রতিরোধ করতে হবে সব অন্যায় সিদ্ধান্ত আর নতজানু নীতির।
ব্লগারদের সাথে আলাপে অনেকেই শংকা প্রকাশ করেছিলেন যে স্থানীয় রাজনীতি আর দারিদ্রের কারণে হয়ত অনেককেই সংগঠিত করা সম্ভব হবে না। হয়ত তাদের আশংকা অনেকটা সত্যও। কিন্তু এও সত্য এই মুহুর্তে প্রতিবাদ প্রতিরোধ ছাড়া আর কোন পথ নেই। ব্লগাররা কাজ করতে পারেন স্থানীয় অপনিয়ন লিডার হিসেবে। কেবল রাজধানী-কেন্দ্রীক আন্দোলনের বদলে আমরা এমনও দেখতে পারি যে ব্রাম্মণবাড়ীয়া, আশুগঞ্জের ব্লগাররা প্রতিবাদ জানিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসনকে। অবহিত করেছেন স্থানীয় মানুষদের। সংগঠিত করেছেন। এটা আমাদের করতেই হবে, কেননা শেষমেশ ক্ষতিগ্রস্থ হবার জায়গায় রয়েছি সেই ৯৯.৯%।
সেই কিশোর ছুঁইছুঁই মুখটার কথা ভুলতে পারিনা কিছুতেই। দু:স্বপ্ন দেখি “বন্ধু” দেশের ট্রানজিট লরিতে পিষ্ট হয়ে থেতলে গেছে তার সমস্ত দেহ। খুব কাছের তিতাসের মত সেও মুখ থুবড়ে পড়ে আছে আর নিচ্ছে রক্তাক্ত শেষ নি:শ্বাস। আর ধূসর হয়ে আসছে তার নদীতে সাঁতার, মাছ, ক্রিকেট...।
এই কিশোরটিকে বাঁচাতে হবে, নিহত হওয়া থেকে, বিষণ্ন হয়ে স্বপ্নহীন হওয়া থেকে। তিতাসকে বাঁচানো সম্ভব। বাঁচানো সম্ভব এই দেশটাকে। দূর কর, প্রতিরোধ কর ট্রানজিট আর টিপাইমুখের কালো ছায়া।
ট্রানজিটের মালামাল পরিবহণের নামে তিতাস নদী খুন হতে পারে না, আমরা তিতাস নদী বাঁচাবই
Subscribe to:
Posts (Atom)