Friday, 5 January 2018

আমার উপরে হামলার চেষ্টা করতে পারেন, কিন্তু আমাকে দমাতে পারবেন না......... পিনাকী ভট্টাচার্য্য

পিনাকী ভট্টাচার্য্য
গতকাল (০৩ জানুয়ারি) রাতে বগুড়ায় আমার স্কুলের বন্ধুরা একটা গেট টুগেদারের আয়োজন করে। বাইরে থেকে আমি ও অস্ট্রেলিয়া থেকে আমাদের আরেক বন্ধু এই দুজন থাকা উপলক্ষ্যেই এই আয়োজন। আয়োজনটা হয় ভুতপুর্ব আলতাফ আলী সুপার মার্কেটের ওখানে, স্কাই ভিউ নামের একটা রেস্তোরায়। অনুষ্ঠান শেষে আনুমানিক রাত এগারোটার দিকে আমি ও আমার আরেক বন্ধু অন্যান্যদের চেয়ে একটু আগেই নামছিলাম। সেই ভবনে সিড়ির বদলে একটা ঢালের মতো স্লোপ আছে যা সবাই সিড়ি হিসেবে ব্যবহার করে, এই স্লোপ দিয়ে সাইকেল বা মোটর সাইকেল উঠে যেতে পারে। সেই স্লোপটা দিয়েই আমরা নামছিলাম। যখন দ্বিতীয় তলার ল্যান্ডিং এর কাছে আসি তখন ল্যান্ডিং এ দুইজন যুবককে দেখতে পাই যাদের মুখ ও মাথা মাফলারে ঢাকা ছিল।
গতকাল বগুড়াতে বেশ ঠান্ডা আর বাতাস থাকায় আমার এটাকে অস্বাভাবিক বলে মনে হয়নি। কিন্তু কয়েক মুহুর্ত পরেই দেখলাম একইভাবে মাফলারে মুখ ও মাথা পেঁচিয়ে এমন পনেরো থেকে বিশজন যুবক ইতস্ততভাবে দাঁড়িয়ে আছে। এদের মধ্যে একজনের মাথায় ফেল্ট ক্যাপ ছিল তার মুখ ঢাকা ছিলনা। আমাকে নামতে দেখেই আমার দিকে কয়েকজন এগিয়ে আসতে থাকে। ততক্ষণে আমার অন্যান্য বন্ধুরা যারা প্রায় বিশ পচিশজনের মতো ছিল সৌভাগ্যবশত নেমে এসেছিল এবং বিপদ আচ করে কয়েকজন আমাকে দ্রুত উপরে নিয়ে যায় এবং অন্যরা এই যুবকদের চ্যালেইঞ্জ করে। আমি উপরে উঠতে উঠতে শুনতে পাই আমার বাল্যবন্ধু চিকিতসক নেতা ডা মিশু উচ্চস্বরে তাদের জিজ্ঞেস করছে, তোমরা কে মুখ ঢেকে এখানে কী করছো? আমি আবার রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসি। প্রায় দশ পনেরো মিনিট পরে মিশু আমাকে কল দিয়ে নিচে আসতে বলে। নিচে এসে দেখি কয়েকটা পুলিশের গাড়ি এবং সাদা পোশাকে অনেক পুলিশ। পুলিশ দলের নেতৃত্বে আছেন বগুড়ার ভারপ্রাপ্ত এসপি সনাতন বাবু। তিনি নিজের পরিচয় দিয়ে বলেন, আপনাকে আমি চিনি, আপনি আসার সময় আমাদের জানালে আমরাই নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতাম। আপনি পরিচিত ফিগার আপনার কোন দুর্ঘটনা হলে সেটা একটা জাতীয় ইস্যু হয়ে যেত। আমি তখনই জানতে পারি উক্ত যুবকেরা সেখানে ঘন্টা খানেক ধরে অপেক্ষা করছিল, রেস্তোরাঁর কর্মিরা তাদের জিজ্ঞেস করলে তারা আমাদের সংগি বলে জানিয়েছিল। ডা মিশু সহ আমার সকল বন্ধুরা বগুড়ায় সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত অনেকে সরকারি ও বিরোধী নানা রাজনৈতিক দলের সাথেও যুক্ত, সম্ভবত তাদের সবাইকেও একসাথে ঐখানে দেখবে সেটা উক্ত যুবকেরা ভাবেনি। তাই আমি শুনলাম তাদের চ্যালেঞ্জ করামাত্র তারা দ্রুত সটকে পড়ে। একজনের মুখের মাফলার খুলে পড়েছিল বলে আমার বন্ধুরা জানায় কিন্তু তাকে কেউই চিনতে পারেনি। এটা নিশ্চিত তারা আমার জন্যই অপেক্ষা করছিল। বড় দুর্ঘটনা ঘটানোর ইচ্ছা বা প্রস্তুতি ছিল কিনা জানিনা তবে আমাকে হ্যারাস করা বা ভয় দেখানোর উদ্দেশ্য যে ছিল তাতে সন্দেহ নাই।
আমি লেখালেখি করি, কোন রাজনৈতিক দল করিনা। আমার লেখালেখি সকলে পছন্দ করবে না এটাই স্বাভাবিক। তাই যদি কারো অপছন্দ হয় তাহলে তারা লিখেই পাল্টা জবাব দেবে। আমার ভুল ধরিয়ে দিবে। দেশের সব মানুষ তো কখনই একই মতে বিশ্বাস করবে না। সামাজিক বিতর্কের মাধ্যমে সকল ভিন্নমত নানাভাবে সমাজে থিতু হবে। দেশে যখন রাজপথে রাজনৈতিক কর্মকান্ড প্রায় রুদ্ধ সেইসময় বিকল্প কণ্ঠস্বর হিসেবে ফেইসবুকে যারা লিখালিখি করে তাদের যদি এভাবে শারিরিক আক্রমনের হুমকি দেয়া হয় বা শারিরিক আক্রমণ করে স্তব্ধ করে দেয়ার চিন্তা করা হয় তাহলে দেশ কোথায় যাবে?
তবে একটা কথা, আমার বাড়ি বগুড়া, আমার পরিবার সেই পাকিস্তান আমল থেকে বিভিন্ন সময়ে নানান নিগ্রহের শিকার হয়েছে। ফলে এসবের সাথে আমার পরিচয় আছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের পুরো বাড়ি পাকিস্তানি আর্মি গান পাউডার দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছিল। আমার জেঠু সত্য ভট্টাচার্য রাজশাহীর খাপড়া ওয়ার্ডের গুলিবিদ্ধ বন্দি কমিউনিস্ট। বগুড়াতে আমার জন্ম, আমার নাড়ি পোতা আছে বগুড়ায়, আমি বানের জলে ভেসে আসিনি। কোন ছিচকে সন্ত্রাসী যদি মনে করে ভয় দেখিয়ে আমার লেখালেখি বন্ধ করে দিতে পারবে তারা অর্বাচীন।
মৃত্যুভয়ে পিনাকী ভীত নয়। মানুষ যেহেতু একবারই মরে তাই রোগে ভুগে মরার চাইতে লড়াই করতে করতে মারা যাওয়াটা অধিক গৌরবের। একদিন বাংলাদেশ থেকে গুম, সন্ত্রাস আর খুনের সংস্কৃতি দূর হবে, সেদিন ওই মাফলারের পিছনে কোন কোন মুখ লুকিয়ে ছিল তা জনগন দেখে নেবে। বাংলাদেশে ভয়ের সংস্কৃতির জন্মদাতারা নিপাত যাক।
গুটিকয়ের ঘৃণার চাইতে অসংখ্য মানুষের ভালোবাসা বেশী শক্তি রাখে। আপনাদের ভালোবাসার শপথ, আমার লেখালেখি কোন রক্তচক্ষুর কাছে নত হবেনা।

পিনাকী ভট্টাচার্য্য
লেখক ও অনলাইন একটিভিষ্ট

No comments:

Post a Comment