Sunday 14 July 2013

প্রিয়তা (বড় গল্প) লিখক: তৃষা

প্রিয়তার মেজাজটা খুব খারাপ। অকারনে খারাপ নয় পুরোপুরি যুক্তিসঙ্গত কারনে খারাপ। দুই সপ্তাহ পর তার নাচের কম্পিটিশনের ফাইনাল অথচ সে হাসপাতালে। কারন তার ডান পা টার ভেতরে কাঁচ ঢুকেছে। বড়সড় জাম্বু সাইজের কাঁচ। পায়ের রগ নাকি কেটে গেছে। ডাক্তার এক কথায় বলেছে নাচ আর হবে না অন্তত এক বছর। এর পরেও নাচতে পারবে কিনা জানেন না। তবে এটা জানেন এখন যদি নাচতে যায় পায়ের সেলাই কেটে যাবে। তখন আবার অপারেশন করতে হবে। অবস্থা আরো খারাপ হবে। অবশ্য নাচতে পারবে না প্রিয়তা। পা ই নড়াতে পারছে না নাচবে আর কি করে। আগের এপিসোডগুলো টেলিকাস্টের অপেক্ষায় আছে তবে এবার তো লাইভ। কি করবে ভেবে পাচ্ছে না প্রিয়তা।
ঘটনাটা ঘটেছে গতকাল। প্রাকটিস করতে এসেছিল প্রিয়তা। ওকে এবার কেউ হারাতে পারবে না। ফাইনালের জন্য পেয়েছে কত্থক। সাথে একটু কনটেম প্রোরারি মিক্স করেছিল। ফাইনাল ওরা পাঁচজনে পাঁচ রকমের নাচ পেয়েছে। ভারতনাট্যম, কত্থক, সিনেমা, ওয়েসটার্ন আর বলিউড। এই নাচের কম্পিটিশনটা অন্য গুলোর মত নয়। বেশ ভাল মানের। জিততে পারলে পাবে ১৫ লাখ টাকা, একটা গাড়ি, শিক্ষাবৃত্তি, আরো নাচ শেখার জন্য স্কলারশীপ আর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে এগ্রিমেন্ট। প্রিয়তা এবার জিতবে সবাই সে বিষয়ে নিশ্চিত। জাজেস মার্কস আজ পর্যন্ত ওর থেকে বেশী কেউ পায় নি আর ভোট ও সবসময় অনেক পাচ্ছে। তাছাড়া ফাইনালে ও আর ওর কোরিওগ্রাফার শফিক ভাই এমন কোরিওগ্রাফি করেছে কারো বাপের সাধ্য নেই জেতার। নাচটাকে টেকনিকালি আর ইমোশোনালি দ্যা বেস্ট করে ফেলেছে। ওর নাচ দেখে কড়াকড়ি কোরিগ্রাফার শফিক ভাইও কেঁদে দিয়েছেন। লোকটা প্রিয়তাকে খুব স্নেহ করেন। এই কম্পিটিশনে প্রিয়তার জন্যে যা করেছেন শফিক ভাই তা সত্যিই অকল্পনীয়।
অথচ সবার আশা ভেঙে প্রিয়তা এখন হাসপাতালের বেডে। ওর কেন যেন মনে হচ্ছে ওর পায়ে এই গাবদা সাইজের কাঁচ ঢোকাটা দূর্ঘটনা নয়। একটা প্রোফেশনার কম্পিটিশনের প্রাকটিস রুমে আলো থাকবে না আর ও একটু এগুতেই এই সাইজের কাঁচ ওর পায়ে ঢোকার জন্যে অপেক্ষা করবে এরকমটা হয় না। প্রিয়তা ঘরে আলো নেই বলে শফিক ভাইকে ফোন করে ওর চেয়ারের সামনে জিনিসপত্র রাখতে গেছে তখনি টের পেল পায়ে কিছু ঢুকেছে। অথচ ব্যাথা পেল না। চেয়ারেই বসে জ্ঞান হারিয়ে ফেলল।
প্রিয়তার এই দূর্ঘটনার কথা শুনে ছুটে এসেছেন মামা মামি। গত সাত বছর প্রিয়তা তাদের সাথেই থাকছেন। পড়ালেখা, নাচের প্রাকটিস সব এখানেই করে প্রিয়তা। ওর জন্য আলাদা ঘর আছে নিচতলায়। সবাই দোতলায় থাকে ও ইচ্ছে করে নিচতলায় থাকে। নাচের প্রাকটিস করার সময় যাতে সমস্যা না হয়।
বাড়িটা প্রিয়তার নানা নানীর।নানা অনেক বড় চাকরি করতেন। অনেক টাকা জমিয়েছিলেন। কিন্তু একাত্তরে পাকিস্তানীরা সব টাকা লুট করল। নানা মারা গেলেন যুদ্ধে। নানীরও কোন খোঁজ পাওয়া যায় নি। পড়ে রইল বাড়িটা। যুদ্ধের পর ছোট্ট প্রিয়তার মাকে নিয়ে তার মামা ফিরে এলেন। বাকী দু ভাইও মারা গেছে যুদ্ধে। যুদ্ধের পর অতটুকু বয়সেই মামা শুরু করলেন জীবনযুদ্ধ। বিয়ে করলেন মামীকে। বাচ্চা কাচ্চা না হওয়ায় মামী প্রিয়তার মাকেই সন্তানের মত মানুষ করেছেন। তাদের বয়সের পার্থক্যও ছিল না তাই সম্পর্কটাও অন্যরকমের ছিল। প্রিয়তার আট বছর বয়সে অবশ্য তাদের একটি মেয়ে হয়। নাম জেনি। খুব দুষ্টু।
প্রিয়তার বাবা মা শিক্ষিত। মা ব্যাঙ্কে চাকরি করতেন আর বাবা আর্কিটেক্ট। উচ্চাশা তাদের ছিল না। বড় চাকরির অফার পেলেও তারা করেন নি। ছোটখাট চাকরিই করতেন। যা বেতন পেতেন তাতে ঘুরতেন। সামান্য জমিয়েছিলেন। প্রিয়তার এক বড় ভাই ছিল জাহিদ। মারা গেছে। হার্টের সমস্যা ছিল। মারা গেছে। খুব আদরের ছিল। সিঙ্গাপুর নিয়ে গেলে অসুখ সারানো যেত কিন্তু সেই টাকা ছিল না। জমানো টাকা সব খরচ করেছেন। মামাও জমানো টাকা শেষ করেছেন। সিঙ্গাপুরে যাওয়ার জন্যে মামা তার অফিস থেকে টাকা লোন নেবেন বলেছিলেন। লোনের নিয়মকানুনঅনুযায়ী একটু সময়ের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু ভাইটা সেই সময় দিল না। মারা গেল।
জাহিদ মারা যাওয়ার পর পাথর হয়ে গিয়েছিলেন প্রিয়তার বাবা মা। কোন অজ্ঞাত কারনে প্রিয়তার মা সহ্য করতে পারত না প্রিয়তাকে। বাবা কিছু বলতেন না। চুপচাপ থাকতেন। এই অনাদরের কারন প্রিয়তা এখনো বের করতে পারে নি। জীবনে টাকার অনেক দরকার এটা উপলব্ধী করে চলে গেলেন আমেরিকা টাকা উপার্জন করতে। ফেলে গেলেন প্রিয়তাকে। তাদেরই নাকি থাকা খাওয়ার ঠিক থাকবে না প্রিয়তাকে নিয়ে গিয়ে কি খাওয়াবে। তবে কারন সেটা নয় প্রিয়তা বুঝেছিল। কিছু জিজ্ঞেস করে নি। তাছাড়া মামা মামীর কাছে খুব ভাল আছে প্রিয়তা।
প্রিয়তার মামা মামী খুব ভাল মানুষ। প্রিয়তার মাকে যতটা ভালবাসেন তার থেকে প্রিয়তাকে অনেকটা বেশীই ভালবাসেন। খাওয়া দাওয়া শখ আহ্লাদ পূরনে ঘাটতি রাখেন নি। প্রিয়তার মামা একটা কোম্পানির এমডি। সম্পূর্ন নিজের চেষ্টায় এসেছেন এতদূর। না খেয়ে বোনকে খাইয়ে টাকা বাচিয়ে পড়ালেখা করেছেন। স্কলারশীপের টাকায় সংসার চালিয়েছেন। বই কেনার টাকা ছিল না। লাইব্রেরি থেকে বই এনে পড়েছেন। তিনি নিজের সংসারটাকে একটা ভাল অবস্থানে নিয়ে ঠেকিয়েছেন। আর পুরো সময় তাকে সঙ্গ দিয়েছেন মামী।
প্রিয়তা নাচের কম্পিটিশনে যে টাকাটা পাবে সেগুলো মামা মামীকে দিয়ে দেবে। প্রিয়তার পরিবারের জন্য সন্চ্ঞয় শেষ করেছেন তিনি। প্রিয়তার বাবা মাকে বিদেশে পাঠানোর জন্যে লোন নিয়েছিলেন। ওখানে তাদের একটা ফ্লাট কিনে দিয়েছিলেন। হাতে তাদের জমানো কিছুই নেই বরং আছে ঋণ। সবটা দিয়ে তাদের কিছুই থাকবে না। জেনীর ভবিষ্যত্‍ নিজেদের ভবিষ্যতের কথা ভাবেন নি তার মামা মামী। তাদের ভবিষ্যতের কথা ভাবছে এখন প্রিয়তা। গাড়িটা হলে জেনির নামে দিয়ে দেবে সেটা। মেয়েটা অতদূর কষ্ট করে স্কুলে যায়। দেখতেভাল লাগে না প্রিয়তার। প্রিয়তা সবসময় রিক্সায় গেছে এসেছে। কিন্তু জেনী হেটে যায় হেটেআসে। এসব ভাল লাগে নি প্রিয়তার।
তাছাড়া কালকে আসবেন তারা। এসে তাকে নিয়ে যাবে। বাবা মা আমেরিকায় প্রতিষ্ঠিত এখন। দু হাতে টাকা উপার্জন করে কয়েক মিলিয়ন ডলারের মালিক। তাদের প্রতিভা ছিল কখনো কাজে লাগায় নি। এখন লাগিয়েছেন।
প্রিয়তার যেতে ইচ্ছে করছে না। জানে এখানে যে ভালবাসা পায় তার সিকি পরিমান ভালবাসা ওখানে পাবে না। মামা মামী খবরটা শুনে খুব কষ্ট পেয়েছেন। তাও যাবে প্রিয়তা। বাবা মা তো। ফেলতে পারছে না। তবে এত স্বপ্নের মাঝে বাঁধা হয়ে এখন দাঁড়িয়েছে ওর দূর্ঘটনা

২.
ঘুম থেকে উঠে দেখল বড় বড় একজোড়া চোখ তাকিয়ে আছে তার দিকে। চোখগুলোএকটা বাচ্চা ছেলের । জেনির থেকে ছোট হবে বয়সে। বেশ আগ্রহ নিয়েই তাকিয়ে আছে। ছেলেটাকে চিনতে পারল না প্রিয়তা। কখনো প্রিয়তা দেখেও নি ছেলেটাকে। কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে স্পষ্ট ইংরেজিতে বলল,
=are you priyota?
=yes.i am.but who are you?
=my name is rassuel.
=ah..how are you?
=i am fine thanks.but i don't thinkyou are doing very well.
=why?
=because you are in hospital now...
=...yes and i don't know what are are you doing here?
=well,according to my parents youare my sister.
=sorry..i didn't get your words.
=well.my mom is rita and dad is a zaman..and i think they are you parents
=yes they are.
=and i am their son.so you are mysister.
চমকে উঠল প্রিয়তা। তাহলে চলে এসেছে ওর বাবা মা। কতদিন তাদের দেখেনি প্রিয়তা। তাদের সাথে সম্পর্ক এতটুকুই যে প্রতি মাসে তারা ২০০ ডলার করে প্রিয়তাকে পাঠান। প্রিয়তার মামা সেগুলো প্রিয়তার নামে ব্যাঙ্কে জমিয়েছেন। প্রায় ১০ লাখ টাকা জমেছে সেখানে।
=তুমি বাংলা বলতে পার?
=হ্যা পারি এবং খুব ভালমতই পারি।
=গুড।তোমার বয়স কত?
=আট বছর।
=তোমার বাবা মা কোথায়?
=তারা বাইরে ডাক্তারের সাথে কথা বলছেন। তোমাকে বাড়ি নিয়ে যেতে চায়।
=কেন?
=আমরা এখানে কিছুদিন থাকব। মামা চান সবাই একসাথেই থাকি। তাই ডাক্তারকে সে বিষয়েই বলছেন বাবা।কিছু কাগজপত্র সাইন করে তোমাকে নিয়ে যাবে।
=কিন্তু আমি তো সুস্থ্য নই।
=তাই তোমার জন্যে একজন ডাক্তার আর নার্সের ব্যাবস্থা করছেন তারা।যাতে তোমার কোন সমস্যা না হয়।
প্রিয়তার মেজাজ পুরোটা খারাপ হয়েগেছে।প্রিয়তা জানত ও না যে তার আটবছরের একটা ছোট ভাই আছে।পুরো ন বছর তাদের সাথে থেকেছে প্রিয়তা।কত যে ভালবাসত তাকে বাবামা।কত জায়গায় ঘুরেছে তারা একসাথে।জ্বর হলে বাবা মা ভাইয়া একসাথে জেগে থাকত।আর সেই বাবা মা এত পর হয়ে গেছে।ভাবতেই পারছে না।প্রিয়তার মাথা টনটন করছে।বেশী মেজাজ খারাপ হলে প্রিয়তার মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে যায়।
আচ্ছা।কি কারন ছিল যে বাবা মা হঠাত্‍ তাকে অপছন্দ করা শুরু করল?তাকে ফেলে চলে গেল।ভাইয়া মারা যাওয়াতে প্রিয়তার তো কোন দোষ ছিল না।হার্টের অসুখে মারা গেছে সে।হার্টে ফুটো ছিল।বুঝতে পারে নি বাবা মা।প্রচুর ঘোরাঘুরিকরতেন তারা।সেবার বান্দরবন গেল সবাই।ইয়া বড় বড় পাহাড়।সবগুলোতে উঠল।ভাইয়ার খুব কষ্ট হচ্ছিল কিন্তু থামে নি।বাড়ি ফিরে এসে আকাশ পাতাল জ্বর ভাইয়ার।তাড়াতাড়ি ডাক্তারের কাছেনিয়ে গেল।অনেক টেস্ট দিলেন।দেখা গেল হার্টে ফুটো আছে।ওপেন হার্ট সার্জারি করতে হবে।সবথেকে ভাল চিকিত্‍সা সিঙ্গাপুরে।কিন্তু ওখানে যাওয়ার আগেই মারা গেল ভাইয়া।প্রিয়তার দোষটা এখনো খুঁজে পায় নি প্রিয়তা।
=তুমি কি কিছু ভাবছ?
=না
=আমি বুঝতে পারছি ভাবছ।
=কিছু ভাবছি না।তুমি কিছু বলবে?
=আমি যদ্দুর জানি এখানে ভাই বোন তুই করে বলে।
=হ্যা
=তাহলে আমিও তোমাকে তুই বলব।তুমিও বলবে।
=আচ্ছা ঠিক আছে।
=তুমি কি কর?পড়ালেখা?
=হ্যাঁ
=কোন ক্লাসে?
=এবার A লেভেল কমপ্লিট করলাম।
=তুমি কি ইংলিশ মিডিয়ামে পড়?
=হুম
=এজন্যই তুমি এত ভাল ইংরেজি বললে।আমি অবাক হয়েছি।দেখেছ তোমাকে তুই বলব বলেছিলাম।
এখন চেষ্টা কর।
=তোকে একটা ইন্টারেস্টিং কথা বলি?
=এইতো হচ্ছে।বল।
=আমার যে কোন বড় বোন আছে তা আমি জানতাম না।বাবা মা গত মাসেই বলেছেন আমাকে।খুব সম্ভবত গত মাসেতোমার বয়স ১৭ হয়েছে।তার পরদিন বলল।কেন বলতে পার?
=না
প্রিয়তার মাথায় কাজ করছে না।এই ছেলেটাকেও মা বাবা কিছু বলে নি।ছেলেটার কথাগুলো শুনতে খুব ভেল লাগছে।ভাঙা ভাঙা বাংলায় কথা বলছে।কি যেন নাম বলেছিল।হ্যাঁ।রাসেল।বাবা মায়ের এই রহস্যময়তা ভাবিয়ে তুলছে প্রিয়তাকে।
=এই যে প্রিয়তা কেমন আছ?
মুখ তুলে তাকাল প্রিয়তা।ডাক্তার আঙ্কেল।
=জ্বী ভাল।
=তোমার বাবা মা এসেছেন শুনেছ তো?
=জ্বী শুনেছি।
=তোমাকে আজ নিয়ে যাচ্ছেন।তুমি একদমই সুস্থ নও তাও তোমাকে ছেড়ে দিচ্ছি।এমনভাবে অনুরোধ করল।তবে আমি প্রতিদিন যাব।একজন নার্সও পাঠাচ্ছি তোমার সাথে।
=ধন্যবাদ।
=সব গোছানোই তো আছে তোমার।যেমনটাএনেছিলে।দেখি তোমার পা টা।
ডাক্তার আঙ্কেল খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছেন।রাসেল সেদিকেই আছে।কি করছে ভ্রু কুচকে দেখছে।প্রিয়তা আবার ভাবছে।মামা মামী কে ছেড়ে কিভাবে যাবে।কখনো কিছু না বললেও প্রিয়তা মামা মামীকে খুব ভালবাসে।দরজায় মামা এসে দাঁড়ালেন।প্রিয়তাকে দেখে হাসলেন।প্রিয়তাও হাসল।
=কি রে মা কেমন আছিস
=ভাল মামা।
=তোর কম্পিটিশন তো গেল রে মা
=এখনো যায় নি মামা।
=তুই কি নাচার চিন্তা করছিস?ভুলেযা।মরে গেলেও এ অবস্থায় তোকে আমি স্টেজে তুলব না।
=মামা।ধৈর্য্য ধর।আল্লাহ কার কপালে কি লিখে রেখেছেন কেউ জানে না।
=তা জানে না তবে এই বিষয়টা আমি জানি।তোর নাচ তো সব পায়ের কাজ।নাচতে গেলে সেলাই খুলে যাচ্ছেতাই হবে।কোনদিন হয়তো হাটতেও পারবি না।তখন কি করবি।
=কি আর করব তোমার কাঁধে চড়ে ঘুরে বেড়াব।
মামার চোখে পানি চলে এল দেখলাম।প্রিয়তা দেখেছি জানলে মামা খুব বিব্রত বোধ করবে।তাই দরজার দিকে তাকালো প্রিয়তা।তাকিয়ে দেখল কৌতুহলি চোখে একজন লোক উঁকি দিচ্ছে।প্রিয়তা চিনতে পারলনা অথচ চেনা চেনা লাগছে।কেমন অপরাধীর মত তাকিয়ে আছে প্রিয়তার দিকে।দেখেই মায়া লাগল।লোকটা সুদর্শন।সৌন্দর্যে মামা আর লোকটার ভাল কম্পিটিশন হবে।নীল রঙের ফুলহাতা গেন্জি পড়েছেন।লোকটাকে কোথায় দেখেছে মনে করতে পারল না।
=বাবা
চমকে উঠল লোকটা।মামাও ফিরে তাকাল।রাসেল ছুটে গিয়ে লোকটাকে জড়িয়ে ধরল।তাহলে এই প্রিয়তার বাবা।
আরে জামান আয় আয়।মেয়ের সাথে কথা বলবি না।আয়।
মামা প্রিয়তার বাবাকে ধরে আনলেন ভেতরে।ডাক্তার পা দেখে একটা হাসিদিয়ে চলে গেলেন।হয়তো এটাকে পার্সোনাল ব্যাপার মনে করে থাকছেন না।
ছোট ছোট পায়ে এগিয়ে এলেন বাবা।
=কেমন আছিস প্রিয়তা?
বলার সময় গলাটা সামান্য কেঁপে উঠল।
প্রিয়তাও চোখের দিকে তাকিয়ে কঠিনকন্ঠে বলল-
=জ্বী ভাল আছি।আপনি ভাল তো?
প্রিয়তা দেখল আবার চমকে উঠল তার বাবা।
 
৩.
প্রিয়তা দেখল তার ছোট ভাইটা খুব আগ্রহ সহকারে তার রুমটা দেখছে।তার রুমটা বেশ সুন্দর।অনেক বড় একটা ঘর।মামা নাচের সুবিধার জন্যে দু টো ঘর ভেঙে একটা করেছেন।একদিকে বেড,পড়ার টেবিল,বুই শেলফ আর ওয়ারড্রোব।ছবি আঁকার কিছু সরন্জাম আর অন্যদিকে বড় একটা আয়না আর সামনে কার্পেট পাতা খালি জায়গা।এই আয়নার সামনে দাঁড়িয়েই প্রাকটিস করে প্রিয়তা।প্রিয়তার খাটের উপল একটা ফ্যান।এসি লাগায় নি সে।ভাল লাগে না।সামনে বারান্দা।সেখানে নানা রকমের ফুলের গাছ মামী করেছেন।ওখানে একটা ডিভান পাতা।সামনে উঠান।বৃষ্টির সময় ওখানে বসে বৃষ্টি দেখার মজা আলাদা।পুরো ঘরে মামা মামী প্রিয়তা আর জেনীর ছবি।সাথে প্রিয়তার আঁকা কিছু ছবি।বিভিন্ন কম্পিটিশনে প্রিয়তার প্রাইজ নেয়া ছবি।উপরের দিকে নানা রকমের চাঁদ তারা ঝুলছে।মুগ্ধ হয়ে দেখছে রাসেল।আর রাসেলকে দেখছে জেনী।আগ্রহ নিয়ে না হিংসাকাতর চোখে।ওর আপুর উপর ভাগ বসাতে এসেছে ছেলেটা বিষয়টা একদম ভাল লাগে নি জেনিল।জেনির বয়স এখন দশ।বয়স অনুযায়ী খুবই বুদ্ধীমতি।এ বয়সেই রবীন্দ্রনাথ নজরুল শেষ করে শেক্সপিয়ার ধরেছে।পড়ালেখা খুব বেশী।পুরো প্রিয়তার মতই হয়েছে।মামী প্রিয়তাকে খাইয়ে দিচ্ছেন।আর কিছু বলার জন্যে মুখ খুলছেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত বলা হচ্ছে না।

=মামী কিছু বলবে?
=না।কি আর বলব।তুই খা।
=খাইয়ে দিচ্ছ তুমি আমি কিভাবে খাব?

মামী অনেক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে ঝেড়ে কাশলেন

বাবার সাথে দেখা হয়েছে?
হুম
মায়ের সাথে?
না
দেখিসও নি একবার?
না
মেয়েটাকে বলেছিলাম দেখা করতে।
সময় হলে দেখা হবে।
তুই কি কিছু জানতে চাস?
আমি কি জানতে চাই তুমি জান কিন্তু কখনো বলো নি।আমিও ঘাটাই নি।এখন যদি নিজ থেকে বলতে চাও বলবে তবে এখনো আমি ঘাটাবো না।

মামী মাথা নিচু করে তাকিয়ে রইলেন।প্রিয়তার এটা ভাল লাগছে না।
মা জেনি
জ্বী আম্মু
রাসেলকে নিয়ে টিভি দেখতো মা।তোমার আপুর সাথে কিছু কথা আছে।তোমার বাবা তোমার জন্যে হ্যারি পটার এর ডিভিডি কিনেছেন দেখে এসো।

=you see movies?
=what did you think we are unsmart..we don't see movies?
=i thought you guys only see bangla movies.
=yeah.thatz our culture.we see our movies but that doesn't mean we do not see other movies!
=i didn't mean that..
=whatever..now will you please come!

রাসেলকে দেখে রীতিমত প্রিয়তার মায়া হল।জেনি বিতর্ক প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ান।ওর সাথে পারা বেশ কষ্টের।

=হ্যা মামী বল।
=মা রে।বাবা মায়ের উপর রাগ করিস না।আমি এখন যা বলব সেটা তোর জানা দরকার।কখনো বলার সাহস হয় নি।কিন্তু তুই বড় হয়েছিস।তোর জানা দরকার।
=বলতে থাক
=তোর ভাইয়া জাহিদ যখন হল তার আগে তোর ভাইয়ার পেটে থাকতে সমস্যা হচ্ছিল।ডাক্তার বলেছিল বাচ্চাটা বাঁচবে না।আমরা অনেক ডাক্তার দেখালাম।কিছুই হল না।পরে রীতিমত পীর ফকির ধরলাম।তারাও কিছু করতে পারল না।পরে এক হুজুর পানি পড়ে দিলেন।কয়েকজনকে নিয়ে ত্রিশবার কোরআন খতম দিয়ে দোয়া করলেন।আল্লাহর রহমতে তোর ভাই সুস্থ্য জন্ম নিল।ও মারা যাওয়ার পর বুঝেছি পেটে থাকতেই ওর হার্টে সমস্যা ছিল।তাই ওর জীবন সংশয় ছিল।

এরপর তুই হলি।তোকে নিয়ে ঘুরতে গেল সিলেটে।ওখানে এক পাহাড়ি পরিবারের সঙ্গে খুব ভাব ছিল ওদের।বলেছিল মেয়ে হলে যাবে।ওখান থেকে আসার সময় শাহজালাল মাজার ঘুরে দেখল।ওখানে পীর ফকিরের অভাব নেই।একটা ফকির হঠাত্‍ পেছন থেকে ডাকল।
মা।বাচ্চাটা কি তোমার?
জ্বী আমার
বাচ্চাটা সম্পর্কে আমি তোমাকে একটা কথা বলতে পারি।
জ্বী বলুন।
আমাকে তার আগে কিছু টাকা দাও মা।কিছু খাই নি আজকে।
তোর ভবিষ্যত্‍ জানার জন্যে না।লোকটার উপর মায়া করেই টাকাটা দিয়েছিল।
মা এই বাচ্চাটার উপর জ্বীনের ছায়া আছে গো মা।এই বাচ্চার জন্য তোমার পরিবারের বিরাট ক্ষতি হবে মা।১৭ বছরের মধ্যে তোদের জীবনে কোন বড় অভিশাপ নেমে আসবে এই মেয়েটার জন্যই।

তোর মা হেসে উড়িয়ে দিয়েছিল।কিন্তু তোর ভাইয়া মারা যাওয়ার পর বিষয়টা নতুন করে মাথায় ঢুকল।ছেলের শোকে তোর মায়ের মাথাটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল।এমনিতেই ছোটবেলায় তোর মামাকে ছাড়া সবাইকে হারিয়েছে আর নিতে পারে নি।পুরো পাগলের মত হয়েগিয়েছিল।তোকে অভিশাপ ভাবা শুরু করেছিল।তোর বাবা বুঝিয়েও কিছু করতে পারেন নি।তোর মা বলেছিল তুই যদি ওর সামনে যাস গলা টিপে তোকে মেরে ফেলবে।তোর বাবা ভয় পেয়ে ওকে বাইরে নিয়ে গেল সম্পূর্ন নতুন পরিবেশে তোকে রেখে গেল আমাদের কাছে।রেখে যাওয়ার সময় তোর বাবার সে কি কান্না।তোর মামার হাত ধরে কেঁদেছিল।তোর মামাও কথা দিয়েছিল তোর মায়ের থেকেও বেশী আদরে রাখবে।এই হল কাহিনি।তোর মা ওখানে গিয়ে সুস্থ্য হয়েছেন।তোর বাবা বড় সাইকায়াট্রিস্ট দেখিয়েছেন।তোর মা ভুল বুঝতে পেরেছিলেন অনেক আগেই।তাও ভয়ে আসেন নি।তোর ১৭ বছর হওয়ার পর এসেছেন তোকে নিতে।

প্রিয়তা হা হয়ে শুনছিল এসব কথা।ভেবেছিল ওকে অনাদরের ঘটনা শুনলে ওর খারাপ লাগবে কিন্তু রীতিমত হাসি পেল।সায়েন্সের যুগে এসব পাগলামি....ভাবাই যায় না।তবে রাগ একটু হয়েছে।বাবা তো এসব বিশ্বাস করেন নি।তিনি তো পারতেন একটা চিঠি পাঠাতে।

মা রে।তোকে একটা কথা বলি।
বল
তোর মা যখন চলে গিয়েছিল তোর মামা খুবই কষ্ট পেয়েছিল।বিয়ের পর ও তোর বাবা এখানেই থাকত।তোর মাকে তোর মামা কাধছাড়া করেন নি।এখন তুইও চলে গেলে লোকটা তো পাগল হয়ে যাবে রে মা।

এই বলেই মামী কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলেন।প্রিয়তার খুব খারাপ লাগল।ওখানে বসেই ভাবতে লাগল কিভাবে এই ভাঙা সংসার জোড়া লাগানো যায়।হাস্যকর হলেও সব কিছুর জন্যে ওই তো দায়ী।

=প্রিয়তা।
=আরে শফিক ভাই এসো এসো
তুই এখানে।হাসপাতালে না দেখে আমি তো চিন্তায় মরে যাই
=ভাল আছো
=আছি।তোর অবস্থা তো কোরোসিন।আম ছালা সব গেল
=কিছু যায়নি শফিক ভাই।
=মানে
=মানে আমি কম্পিটিশন এ এটেন্ড করব
=পাগল হয়েছিস?এই অবস্থায়?
=এই অবস্থা কে করেছে জান?
=কে
=রুমানা
=কি বলছিস?
=ঠিক ই বলছি।কম্পিটিশনে ওর কাঁটা আমিই ছিলাম।সরিয়ে দিয়েছে।আমি ওকে জিততে দেব না
=এটা জেদের সময় না প্রিয়তা
=আমি জেদ করছি না।যত কষ্টই হোক আমি কম্পিটিশন করব।যদি হেল্প না কর আমি চিকিত্‍সা বন্ধ করে দেব।পচুক পা।
=প্রিয়তা।
=আরো সব বলছি তোমাকে।তুমি শুধু না করো না।আমাকে পারতে হবে শফিক ভাই।যেভাবেই হোক।যা কিছু হয়ে যাক।তুমি ব্যাবস্থা কর।

৪.
খুব অস্বস্তি নিয়ে মহিলাটার দিকে তাকিয়ে আছে প্রিয়তা।শুধু অস্বস্তি না বিরক্তও লাগছে।কথা বলতে এসে কেউ যদি এরকম ভ্যা ভ্যা করে কাঁদে বিষয়টা মোটেই সুখকর না।এদিকে প্রিয়তার দেরী হয়ে যাচ্ছে।শফিক ভাই নাচের কম্পিটিশনে ওর পার্টিসিপেশনের সব ব্যাবস্থা করে এসেছে।প্রিয়তা এর মধ্যে একবার গিয়েছিল সেখানে।সবাই ওকে দেখতে এসেছিল।পরিচালক,প্রযোজক,জাজেস সবার সাথে কথা বলছে প্রিয়তা।সবাই না করছে।কিন্তু জেদ করে বসে ছিল।সবাইকে বুঝিয়েছে কেন ওর কম্পিটিশনে পার্টিসিপেট করার দরকার।কেউ বুঝতেও চায় নি।তারপর করেছে ব্লাকমেল।ও জানে ওর অবস্থার জন্যে কে দায়ী।যদি ওকে পার্টিসিপেট করতে না হয় তাহলে তার নাম বল দেবে সাংবাদিকদের।তখন আর এই চ্যানেল,অনুষ্ঠান সব কিছু শেষ।কথায় কাজ হয়েছে।সবাই কিছুক্ষন আলোচনা করল।তারপর সিদ্ধান্ত নিল প্রিয়তা নাচতে পারবে।তবে সিমপ্যাথি জাজেরা ওকে দেখাবে না।এ অবস্থায় যা করতে পারে তাতেই মার্কস দেবে।কম বেশী যাই হোক।যদি প্রিয়তা দেখে যে আর পারছে না তখন স্টেজ থেকে যাতে চলে যায়।আর নাচের আগে এ অবস্থাতেও কেন নাচছে তা যাতে মিডিয়াকে জানিয়ে যায়।
প্রিয়তা শর্তে রাজি হয়েছে।নাচ নিয়ে চিন্তা নেই।এতবার করেছে নাচটা এমনিতেও পারবে।শুধু পায়ের উপর দাড়াতেই কষ্ট হচ্ছে।এর মধ্যে যে কিভাবে নাচবে সেটাই ব্যাপার।কিছুক্ষন পর ডাক্তার আঙ্কেল আসবেন ওকে সহজে হাটতে সাহায্য করবেন।কিন্তু ইনি যা শুরু করেছেন তাতে মনে হয় আজ আর কিছু হবে না।মহিলা সম্পর্কে ওর মা।যে মা তাকে রেখে চলে গিয়েছিল।তিনি প্রিয়তার কাছে মাফ চাইতে এসেছেন।এসে সেই যে কান্না শুরু করেছেন থামছেন না।মামা মামী আর বাবা উপরে।জেনী আর রাসেল এর ভাব হয়ে গেছে।রাসেল ছোট আপু ছোট আপু করে বাড়ি মাথায় তুলেছে।উঠানে খেলছে।

আপনি কি কান্না বন্ধ করবেন দয়া করে।কিছুক্ষন পর ডাক্তার আঙ্কেল আসবেন।আপনার কিছু বলার থাকলে ঝটপট বলে ফেলুন।

প্রিয়তার মা কিছুই বলতে পারলেন না।আবার কাঁদতে শুরু করলেন।প্রিয়তার মাথা টনটন করছে।রাগ ওঠছে খুব।তাও মাথা ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করছে।ইনি অমনিতেই আপসেট।প্রিয়তা তার বিখ্যাত ঠান্ডা গলায় বকা দিলে আর পাওয়ায় যাবে না।এটা হ্যান্ডেল করতে হবে ইমোশোনালি।

আপনি বাবাকে একটু ডেকে দেবেন।আপনাদের দুজনের সাথেই আমার কথা আছে।
এইবার প্রিয়তার মা মাথা তুলে তাকালেন।চোখে আশার ঝিলিক দেখা গেল।তিনি উপরে গিয়ে বাবাকে ডেকে আনলেন।

বাবা এলেন।মা শক্ত হয়ে বসে আছেন।বাবা মায়ের কাধে হাত রাখলেন।যেন তাদের এখুনি মৃত্যুদন্ডাদেশ দেবে প্রিয়তা।
প্রিয়তার খুব মজা লাগছে।এ ধরনের পরিস্থিতিতে কারো মজা লাগতে পারে প্রিয়তার তা জানা ছিল না।হাসি পাচ্ছে প্রিয়তার।কিন্তু হাসল না।

দেখুন।আমি সোজাসাপ্টা আর সত্য কথা বলি।বিশ্বাস করুন আর না করুন আপনাদের উপর কোনদিন আমার রাগ ছিল না এখনো নেই।একটা প্রশ্ন ছিল উত্তর পাওয়ার পর আমি অনেক্ষন ধরে হেসেছি।এরকম মজার কিছু ঘটেছে আগে জানলে আমাকে এসে আর পেতেন না।আমেরিকায় বসে খবর পেতেন হাসতে হাসতেই মেয়েটা মারা গেছে।এই বলেই প্রিয়তা হেসে দিল।কঠিন মুখ আর রাখতে পারল না।প্রিয়তার বাবাও হেসে দিলেন।কি সুন্দর হাসি।তবে প্রিয়তার মা আগের মতই রইলেন।প্রিয়তার কথা হল বাবার সাথে।

=তবে যা করেছেন তাতে আমি অপরাধী আপনাদের মনে না করলেও আপনারা করছেন।আপনাদের অপরাধের জন্যে আপনারা ক্ষমা পাবেন যদি আমার তিনটা ইচ্ছা পূরন করেন।
=আচ্ছা ঠিকাছে।বল।
=ইচ্ছা এক,সম্পর্কে আপনারা আমার মা বাবা হন।আমি আপনাদের সেই নামেই ডাকব আর ছোটবেলার মত তুমিই বলব আর আপনারা তুই
=এটা আবার বলা লাগে!
=ইচ্ছা দুই,আমি জানি আপনারা মামাকে তার টাকা ফেরত দেয়ার কথা ভাবছেন।এটা মামা জানলে খুব কষ্ট পাবে।তিনি তার পরিবারের জন্যে টাকা খরচ করেছেন।মামা খুব ভাল মানুষ।তাকে এই কষ্ট দেবেন না।
=ঠিক আছে।কিন্তু........ আচ্ছা
=আর তৃতীয়টা তোলা থাক সময়মত বলব।কিছু মনে করবেন না।এখন আপনারা যান।আমার ডাক্তার আসবে।
=মা।ছোট্ট ভুল হয়ে গেছে।তুই তোর নিজের ইচ্ছা নিজেই নষ্ট করছিস।
=ওহ।সরি।ঠিকাছে বাবা।যাও।ডাক্তার আসবে।

চলে গেলেন বাবা মা।মা এখনো পাথর হয়েই আছেন।আবার মাথা নষ্ট হল নাকি কে জানে।
বাবা টাকে আবার খুব পছন্দ হয়েছে প্রিয়তার।আগেও মায়ের থেকে বাবাকে বেশী পছন্দ করত।মেয়েরা বাবাপ্রেমী হয় ঘটনা মিথ্যা না।

কিছুক্ষনের মধ্যেই ডাক্তার আঙ্কেল এলেন।সাথে শফিক ভাই।পা দেখলেন কেমন আছে।
=প্রিয়তা।তোমার পায়ের অবস্থা তো বেশ ভাল।তোমার অনুচক্রিকা ঠিকমতই কাজ করছে।তোমার ভাগ্য ভাল পায়ের রগ একটু কেটেছে বেশী না।
=বলেন কি।আমি তো জানতামই না।
=তোমাকে জানানো হয় নি তোমার মামীর জন্য।তোমার মামী বলেছিলেন পায়ের রগ কেটেছে জানাতে কতটুকু কেটেছে না বলতে তাই বলি নি।যা ভাব ভেবে নাই।
=মামী হঠাত্‍ ভিলেন হয়ে গেলেন যে!
=তিনি জানতেন তুমি খুব জেদি।অল্প কেটেছে জানালে এই শরীরেই তুমি নাচার জন্যে লাফাবে।দু ব্যাগ রক্ত লেগেছে তোমার।দুর্বল ছিলে।কিন্তু তুমি তো তুমিই!
=আসলে তোমার মামী তোমায় খুব ভালবাসেন।
=জানি

ডাক্তার প্রিয়তাকে দেখলেন।নাচের স্টেপগুলো দিতে কত সমস্যা হয় সেসব জানলেন।সেই অনুযায়ীই ট্রিটমেন্ট করবে।প্রিয়তা নাচের প্রাকটিস করছে।দেখতেই পেল না জেনী আর রাসেল দেখছে ওকে।ওদের দিকে চোখ পড়ল প্রাকটিস শেষে।ওদের চোখে মুখে রাজ্যের বিস্ময়।প্রিয়তা ভয় পেলেও বুঝতে দিল না।ডাকল নিজের কাছে।

=জেনী,রাসেল এদিকে এসো।

ওরা গেল
=আমার তোমাদের সাহায্য লাগবে
=কি সাহায্য

প্রায় একই সাথে বলল দু জন।
=দেখতেই পাচ্ছ আমি নাচে পার্টিসিপেট করব।তোমাদের কাজ আমাকে বড়দের খেকে বাঁচানো।
=but your foot..isn't is hurt?
=yes it is.but itz important to me
=কিন্তু আপু যদি তোমার খারাপ কিছু হয়
=হবে না।দেখছিস না ডাক্তার নিয়েই লেগেছি।
=then we have to help you?
=thatz up to you russuel.do u two love me?
=more than anything
=তুমি তো আমার লক্ষি আপু।
=তাহলে আমায় সাহায্য কর তোরা।তোর সাহায্য না করলে আমি মাঠে মারা যাব

ওরা আর না করল না।ওদের কিভাবে হ্যান্ডেল করতে হয় জানে প্রিয়তা।

রাতে খুব টায়ার্ড ছিল।না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়ল।তবে টের পেল রাতে কেউ ওর কাছে ঘুমাতে এসেছে।মামীর ছোয়া ও চেনে।তারমানে এটা ওর মা।কাঁদছেন।
এ কটা দিন ভালই কাটল প্রিয়তার।ভাই বোন দুটো বাঁদর হয়ে গেছে কয়েকদিনের।প্রিয়তারও বাঁদরামি করতে ইচ্ছা করে।পায়ে ব্যাথা তাই কিছু করতে পারছে না।তবে ঝামেলাও আছে।মা এখন খোলশ ছেড়েছে।এতদিন মামীর আদরে যাচ্ছেতাই অবস্থা ছিল।এখন দুজন একসাথেই আদর যন্ত্রনা দিচ্ছে।বাবা আর মামা তাদের রাজ্যের এডভেন্চারের কথা শোনাচ্ছেন।প্রিয়তার বাবা জামান সাহেবের প্রিয়তাকে খুবই পছন্দ হয়েছে।নিজের মেয়ে এত স্মার্ট হবে ভাবেন নি।পোষাক আষাক চাল চলন কথা বার্তা সব কিছুতেই বুদ্ধিদীপ্ততা।এরই মাঝে প্রিয়তার মামার কাছে ক্ষমা চেয়ে খুব কেঁদেছেন তিনি।সেটা কেউ জানে না।এক সুন্দর একটা মেয়েকে এভাবে ফেলে রেখেছিলেন ভাবতেও খারাপ লাগছে।

প্রিয়তার মা মেয়ের গুন দেখে মুগ্ধ।প্রিয়তা হাঁচি দিলেও বলছে দেখেছ ভাবী মেয়েটা কত সুন্দর হাচি দেয়।একদিন ঠিক করেছে প্রিয়তা খুব বাজে করে নাক পরিষ্কার করবে।প্রিয়তার মা কি বলেন সে তা শুনতে চায়।একটা প্লাস্টিকের তেলাপোকা যোগাড় করেছে।মাকে দেখিয়ে খাবে।হয়তো তিনি তখনো বলবেন ওমা ভাবী দেখ।প্রিয়তা কেমন কচকচ করে তেলাপোকা খাচ্ছে।পরিকল্পনা অনুযায়ী কম্পিটিশনের পরপরই কাজ করবে সে।

প্রিয়তার মামী একটু কষ্টে আছেন।প্রিয়তার মা আর প্রিয়তা দুজনকেই তিনি বড় করেছেন।দু জন ই ছেড়ে চলে যাবে দূর দেশে বিষয়টা ভাবলেই বুকে মোচড় দিয়ে ওঠে।বাড়িটা খালি খালি হয়ে যাবে।তার দিন যে কি করে কাটবে।প্রিয়তা কিছু হলেই মামী মামী বলে ছুটে আসত।আজ এটা কাল ওটা কিছু না কিছু করে বাড়ি মাথায় তুলত।

প্রিয়তার মামার মনটা খুব খারাপ।সেদিন জামান এসে মেয়েটার জন্যে বাচ্চাদের মত কেঁদেছে।ও প্রতি সপ্তাহে চিঠি দিত।চিঠিগুলো যাতে প্রিয়তা না দেখে তা বিশেষভাবে লিখে দিত।প্রিয়তার মা যখন চলে গেছে খুব কষ্ট হয়েছিল তার।প্রিয়তা গেলে কিভাবে থাকবেন তিনি!জেনি প্রিয়তা ছাড়া কিচ্ছু বোঝে না।তায় আদরের মেয়েটাকে কিভাবে সামলাবেন তিনি?

জেনির মন খারাপ।প্রিয়তাপু নাকি চলে যাবে।ও একা বাসায় কি করবে?প্রিয়তাপু ওকে কত্ত বই দেয়,কলেজ থেকে আসার সময় কত কিছু নিয়ে আসে,নাচ শেখায়।প্রিয়তাপু চলে গেলে একা হয়ে যাবে।ও প্রিয়তাপুকে কিছু দিলে জড়িয়ে ধরে কত্ত আদর করে প্রিয়তাপু।ভাবলেই কান্না পাচ্ছে।

রাসেলেরও মন খারাপ।কয়েকদিন পর মামা মামী ছোটআপুকে রেখে চলে যাবে।ছোট আপু অনেক ভাল।একসাথে ওরা বই পড়ে সিনেমা দেখে।খেলা করে।মামা ওর সাথে বসে লুডু খেলে।মামী কুমড়ো বড়া বানিয়ে দেয়।আর প্রিয়তাপু বলেছিল বৃষ্টির সময় বৃষ্টিতে ভিজবে একসাথে।তার কিছুই হবে না।

প্রিয়তা খুব ভাল আছে।পরিবার একসাথে করার চেষ্টা করছে।সবার সেন্টিমেন্ট ইমোশন নিয়ে খেলা করছে প্রিয়তা।হাটতে গিয়ে মামীর সামনে ইচ্ছা করে পড়ে গিয়েছে।মামী এসে ওকে ধরল।মা এসে পা টা দেখছে।মামী স্বভাবসুলম মুখে তুলে পানি খাইয়ে দিচ্ছে।মা দেখে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল।
একদিন একটা তাওয়া গরম করে মাকে প্রিয়তা বলল ওর উপর থেকে বাদাম আনতে।মা জানত না।দিল হাত।তারপর মা দিল গগনবিদারী চিত্‍কার।সাথে সাথে মামা মামী ছুটে এসে হাতে বরফ,ওষুধ এসব লাগিয়ে দিল।মা এসব দেখে আরো কান্না শুরু করল।থামানো যায় না তাকে।

একদিন প্রিয়তার বাবা দেখল প্রিয়তা মামা মামীর ছবি হাতে কাঁদছে।বুক ফেটে গেল কিছু বলল না।আসলে যে প্রিয়তা টোপ ফেলে রেখেছিল তা আর কে জানত।

প্রিয়তার ভাই বোনগুলোও কম যায় না।প্রিয়তা ওদের শিখিয় দিল কি করতে হবে।ঘটনাটা এরকম।উপরে সবাই বসে আছে।প্রিয়তা বারান্দায় বসে আর ও দুটো উঠানে।

=তোরা সত্যিই চলে যাবি?
=কি করব বল।বাবা মা তো শুনছে না।
=তোর বাবা মা একদম ভাল না।প্রিয়তাপুকেও নিয়ে যাচ্ছে।
=তোরাও চল না আমাদের সাথে।
=না।আমি দেশ ছেড়ে যাব না।
=কিন্তু আমি আবার একা হয়ে যাব
=একা কেন?প্রিয়তাপুতো থাকবেই।
=একসাথে থাকা আর এভাবে থাকে এক না।

একপর্যায়ে ওরা কান্না শুরু করল।খোড়াতে খোড়াতে প্রিয়তা গের সান্ত্বনা দিতে।ওকে জড়িয়ে কি কান্না ওদের।প্রিয়তা বেশ বুঝতে পারছিল ওরা সত্যিই কাঁদছে।

এদিকে শফিক ভাই একদিন অনুষ্ঠানে সবাইকে দাওয়াত দিয়ে বসল।টিকেট পর্যন্ত এনেছে।প্রিয়তা সব জানত।ভাব করেছে যে কিছুই জানে না।
সবাই যেতে রাজি হল।তবে শফিক ভাই বললেন প্রিয়তাকে আগে যেতে হবে।ওর অনুষ্ঠান ছিল এখন ও নেই বলে ওকে তো ফেলে দেবে না।
এতেও সবাই রাজি হল।কথা হল ফাইনালের দিন সকালে প্রিয়তাকে নিয়ে যাবে শফিক ভাই।বিচ্ছু দু টো যেতে চাইছে।একবার ভাবল না করবে।পরে ভাবল সাথে নেবে।কখন কি বলে দেবে তার ঠিক নেই।

তবে প্রিয়তার ডাক্তার খুব চিন্তায় আছে।পেশেন্ট এর অবস্থা খুব ভাল নয়।কিভাবে যে নাচবে!নাচতে গিয়ে মেয়েটার কিছু হয়ে গেলে কি করবেন তিনি।সারাটাজীবন নিজেকে ক্ষমা করতে পারবেন না।ঘা এখনো শুকায় নি।সেলাইটাও খোলেন নি তিনি।প্রতিদিন লাফালাফিতে প্রিয়তার পা টা সময়মত সারছে না।মেয়েটাও হয়েছে গোয়ার!

তবে প্রিয়তা নিশ্চিন্তে আছে।সে জানে সে জিতবেই।
 
৫.
আজ প্রিয়তার ফাইনাল।জেনী,রাসেল,ডাক্তার আঙ্কেল,শফিক ভাই এখন তার সাথে।প্রিয়তা একবার প্রাকটিস করল পুরো নাচটা।পায়ের নিচে কার্পেট।ডাক্তার আঙ্কেল খুব ভাল করে ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দিয়েছেন।কত্থকের মাঝে যখন কনটেমপ্ররারী দিল তখন প্রিয়তার দুই ভাই বোন চেঁচিয়ে উঠল খুশিতে।তার মানে খারাপ হচ্ছে না।বাচ্চারা খুব ভাল বুঝতে পারে সব কিছু।তবে বীট ধরতে সমস্যা হচ্ছে।পা টা খুব আলতো করে ফেলতে হচ্ছে।তাই টাইমিং এ সমস্যা হচ্ছে।
দুপুরের দিকে ডাক্তার আঙ্কেল,জেনী আর রাসেল গেল চেন্জ করতে।খেয়ে ফ্রেশ হয়ে চেন্জ করে আসবেন।শফিক ভাই কস্টিউম আনতে গেছেন।প্রিয়তার পায়ে খুবই ব্যাথা করছে।তাও সে দাঁত কামড়ে সহ্য করছে সব।এরই মাঝে প্রিয়তার সাথে দেখা করতে রুমানা এল।

=প্রিয়তা।ভাল আছ?
=আরে রুমানা।এসো এসো।ভাল আছি।বসো।
=তুমি কত্থক করছ তাই না?
=হ্যাঁ।তুমি কি করছ।
ভরতনাট্যম।
=গুড।you r perfect.
=তোমার পা কেমন আছে।
=ব্যাথা করছে
=তারপরেও নাচবে?
=i have to.
=দর্শকের ভোট গোনা হয়ে গেছে জান তো?আজকে জিততে হলে শুধু তুমি আর তোমার নাচ
=হ্যাঁ।সব জানি
=প্রিয়তা
=হ্যাঁ।বল
=i am sorry...
এই বলে কাঁদতে শুরু করল রুমানা।মেয়েটা তার ভুল বুঝতে পেরেছে
=কেঁদো না।যা হবার হয়েছে।
আর দেখো।আমি এখন সুস্থ্য।
তুমি এসব মাথা থেকে ঝেড়ে নাচে কনসেনট্রেট কর।all the best.
রুমানা কাঁদতে কাদতেই চলে গেল।কিছুক্ষন পর মিডিয়া আসল।প্রিয়তাও জানিয়ে দিল সম্পূর্ন নিজের ইচ্ছায় ও নাচছে।নাচতে গিয়ে যদি খারাপ কিছু হয় দায়ী থাকবে প্রিয়তা নিজে আর কেউ না।

কিছুক্ষন পর শফিক ভাই এলেন।প্রিয়তার কস্টিউম নিয়ে।
=শফিক ভাই।থেঙ্কস।
খেঙ্কস কেন!
=আমায় এত সাহায্য করলেন তাই।
=মা রে থেঙ্কস আমার তোকে বলা উচিত্‍।আমি সবচেয়ে ভাল নাচতাম আমাদের কলেজে।আমার মধ্যে কোন মেয়েলি ভাব ছিল না।সব দিক দিয়ে পারফেক্ট ছিলাম।তাও এখান জায়গা করতে পারি নি।হাতে কাজ ছিল না।কত কষ্ট করেছি।তুই এসে আমার এখন কত নামডাক।কপাল করে তোর মত স্টুডেন্ট পেয়েছি মা।তুই যে কত ভাল নাচিস তুইও জানিস না।আর তোর এত ইচ্ছাশক্তি।সব কিছুকে হারিয়ে দিলি মা।

মাথা নিচু করে সব শুনছে প্রিয়তা।ওর জন্য ভাল কিছু হয়েছে ভেবে ওর খুশিতে অনেকদিন পর চোখে পানি চলে এল।

=শফিক ভাই আমার একটা কাজ করে দেবেন?
=কি কাজ?
=আমার নাচ শুরু হওয়ায় ঠিক আগে বাবার হাতে এই চিঠিতে দিয়ে আসবেন।
=আচ্ছা।তুই রেডি হওয়া শুরু কর।

আর কিছুক্ষন পর প্রিয়তা স্টেজে যাবে।কেউ জানে না বিষয়টা।তাই মামা মামী বাবা মা কাউকে বলা হয়নি দোয়া করো আমার জন্যে।সবাই চলে এসেছে।বসে আছে প্রথম সারিতে।জেনী,রাসেল,ডাক্তার আঙ্কেল ওরার গিয়ে বসেছে।ব্যাকস্টেজে এখন প্রায় একা সে।শফিক ভাই লাইটিং,মিউজিক সব ঠিক করতে গেছেন।প্রিয়তা আজকে পারবে কিনা জানে না।তবে পারতেই হবে এটা জানে।

বাকী চারজনের নাচও খুব ভাল হয়েছে।আরিয়ান,রুমানা,সবুজ আর নিপা।অনেক হাত তালি পেয়েছে।জাজেসরাও খুব প্রশংসা করছেন।এখনি প্রিয়তাকে ডাকবে রিয়া আপু,উপস্থাপিকা।পর্দার ফাঁক দিয়ে দেখল শফিক ভাই চিঠিটা বাবাকে দিচ্ছেন।

"এবার স্টেজ মাতাবে আজকের শেষ পার্টিসেপেন্ট।যে ফাইনালে সবচেয়ে বেশী মার্কস পেয়ে উঠেছে।কিছুদিন আগে একটা একসিডেন্ট হয়েছিল কিন্তু সে দমে নি।বিপুল সাহস নিয়ে এগিয়ে গেছে।এসেছে ফাইনালে পার্টিসিপেট করতে।স্টেজে আসছে প্রিয়তা...."

খোড়াতে খোড়াতে স্টেজে গেল প্রিয়তা।দেখল মামী আর মা কাঁদছে।প্রিয়তা একটা ঘিয়া রঙের ড্রেস পড়েছে।এক্কবারে আনার কলি লাগছে ওকে।শুরু হল গান-পিয়া কি নাজারিয়া।

নাচ শুরু করল প্রিয়তা।ও জানে কি করতে হবে।বীট মেলাতে হলে প্রোপারলি পা ফেলতে হবে।আলতো করে ফেলে লাভ নেই।শুরু হল আলাপ দিয়ে।আলাপের সাথে নাচগুলো বেশ সোজা।এরপরে শুরু হল আসল নাচ রাগের সাথে।প্রিয়তা বীটের সাথে প্রতিটি পা ফেলছে আর মনে হচ্ছে ওর পা টা ছিড়ে ফেলে দিলে হয়তো ভাল হত।পায়ের কাটা রগটাতে টান খাচ্ছে খুব।এত যন্ত্রনা সহ্য হচ্ছে না।এই বুঝি মাথা ঘুরে পড়ে যাবে।তাও নেচেই চলেছে প্রিয়তা।আজ তাকে নাচতেই হবে।পাঁচ মিনিটের গানের চার মিনিট শেষ।প্রিয়তা নাচছে প্রানপনে।শেষ মিনিটে বুঝল পায়ের সেলাই কেটে গেছে।পায়ে ব্যান্ডেজ তাই রক্ত বেরোচ্ছে না।কি কষ্ট।

অবশেষে নাচ শেষ হল।প্রিয়তা দেখল কেউ তালি দিচ্ছে না।এতটাই খারাপ হয়েছে তার নাচ!
প্রিয়তা দেখল তার মামা দাঁড়িয়ে গেছেন।হাত তালি দিলেন দাঁড়িয়ে।আস্তে আস্তে রুমের সবাই দাড়িয়ে হাত তালি দিচ্ছে।প্রিয়তার জীবনের শ্রেষ্ঠ দৃশ্য।

৬.
প্রিয়তা এখন হাসপাতালে।অনেক রক্ত গেছে পা দিয়ে।নাচের পর গায়েব হয়ে গিয়েছিল প্রিয়তা।সবাই খুঁজে মরছে।যখন চ্যাম্পিয়ান হিসেবে তার নাম ঘোষনা করা হল সে রক্তমাখা পায়ে এল।সব এলোমেলো লাগছিল প্রিয়তার।গিয়ে প্রাইজগুলো নিল।দেখল মামা নয় বাবা ছবি তুলছেন।এরপর স্টেজেই জ্ঞান হারালো প্রিয়তা।


জামান সাহেবের হাতে এখন প্রিয়তার চিঠি।লিখেছে-

বাবা,
তুমি তো জানই মায়ের থেকে আমি তোমায় বেশী পছন্দ করতাম।তোমাকে আমি আমার তৃতীয় ইচ্ছাটা বলি।আমার ইচ্ছা তোমরা এখানেই থাক।মামা মামীর কাছে।তোমরা চলে গেলে বড্ড একা হয়ে যাবে ওরা।আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম আমি যদি কম্পিটিশন জিতি তাহলে আমি যাবনা তোমাদের সাথে।যদি জিতি তাহলে আমি যাবনা।যেতে হলে তোমরা যাও।আমার ইচ্ছা তোমরাও যাবে না।
ইতি
প্রিয়তা

প্রিয়তার অবস্থা খুব খারাপ।রক্ত থামছেই না।প্রিয়তার মা আর মামী কাঁদছেন।মামাও পাগলের মত করছেন।শান্ত হয়ে বসে আছেন প্রিয়তার বাবা।তিনি যাবেন না ঠিক করেছেন অনেক আগেই।মেয়েটা অযথা এক কিছু করল।
প্রিয়তাকে রক্ত দেয়ার জন্য সবাই এগিয়ে এসেছে।রক্ত দিয়েছে রুমানা নামের মেয়েটা আর শফিক।ডাক্তারও রক্ত থামানোর চেষ্টা করছেন।মেয়েটা একেবারে দুর্বল হয়ে গেছে।ওর ইচ্ছা যা কিছু পেয়েছে সব মামাকে দিয়ে দেবে।মামাকে বড্ড ভালবাসে সে।মামার স্বপ্ন ছিল সে অনেক বড় নৃত্যশিল্পি হবে।দেশের সেরা।হয়েছেও।

জামান সাহেব দেখলেন ডাক্তার বেরোলেন আই সি ইউ থেকে মুখ কালো করে।
সবাই ছুটে গেল।
চিন্তার কিছু নেই।চেষ্টা করছি রক্ত বন্ধ করার।রক্ত বন্ধ হয়ে গেলেই আর সমস্যা থাকবে না।আল্লাহ কে ডাকুন।ও খুব ভাল মেয়ে।দেখবেন ওর কিছুই হবে না।তবে ২৪ ঘন্টা যাক।তারপর বলতে পারব।

সবাই আল্লাহকে ডাকছে। ২৪ ঘন্টা শেষ হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।

2 comments:

  1. অনেক ভাল! এই রকম প্রয়োজনীয় একটা পোস্ট দেয়ার জন্য ধন্যবাদ। আসা করি এই রকম পোস্ট আরও পাব। সময় থাকলে আমার online shopping bangladesh সাইটে ঘুরে আস্তে পারেন।

    ReplyDelete
  2. This post is very useful for us. Because we have a lot of
    tips and tricks from this post. Thank you for this amazing post share. I many
    tips about career builder as well. If you want to know more about a career sites, please visit our website.

    www.bd-career.com

    ReplyDelete