Thursday, 23 July 2015

রহমান হেনরীরদুইটি কবিতা

১// জেরুজালেমের পথে 

জেরুজালেমের রাস্তায় যার সাথে দেখা হয়েছিলো তাকে আমার যীশুই মনে হলো;
স্বপ্নটা ভেঙ্গে যাবার আগে পর্যন্ত প্রশস্ত একটা রাস্তা ধরে
অনেক রাত আমরা পাশাপাশি হাঁটলাম;
কথা হলো বহুপাক্ষিক বিষয়ে।
কেননা, ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সমস্যাটা, তিনি বলছিলেন, দ্বিপাক্ষিক।
অতএব সে প্রসঙ্গ বাদ।
রাস্তার দুপাশে স্তব্ধ দাঁড়িয়ে আছে উঁচু সব বাড়ি, পাথরের;
 যীশু বললেন: 'ফিলিস্তিনী শিশুদের ছুঁড়ে দেয়া পাথর থেকে তৈরি'। '
কী আশ্চর্য! এতো পাথর ছুঁড়েছে!
মর্টার শেল, বোমা কিংবা গুলির কোনও নিশানা নেই'__
প্রভূ যীশু মৃদু হাসলে, ' এখানে নেই।
পাথরের বিনিময়ে সেগুলো, ফিলিস্তিনেই পাঠিয়েছে এরা।'
বললেন: 'মানুষ সৃষ্টির আগে, সদাপ্রভূ ভালোবাসতেন ছাগলগুলোকে।
 ঈশ্বরকে খুব জ্বালাতন করতো ওরা; কাজেই, মানবসভ্যতার সূচনা।' __
'কী রকম?' জানতে চাইলাম।
যীশু জানালেন: 'এমনিতে ওরা কিন্তু খুবই ভালো প্রাণি!
 মেয়েগুলো দুধও দেয়।
 গ্রীষ্মে ঈশ্বরকে ওরা বলতো, আমাদের দেহ থেকে চামড়াগুলো খুলে নাও।
 শীতে বলতো, আবার পরিয়ে দাও ওগুলো!
সদাপ্রভূ খুব বিরক্ত হয়েছিলেন।'
অনুরোধ করলাম: 'চলুন, গাজার সৈকতে হাঁটা যাক!'
 তিনি রাজি হলেন কি হলেন না, লক্ষ করার আগেই স্বপ্ন ভেঙ্গে গেল।


 ২//গাজা, পশ্চিম তীরে -

 'ওবামার সাথে কথা হয়?' - 'হতে পারতো।
 লোকটার স্কেজিউল নেই।
যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘ ছাড়াও একশ বিরানব্বইটা দেশ চালাতে হয়;
আর তাছাড়া... সমকামিতায় আমার সায় নেই।'
 আচমকা বিষম খেয়ে কাশতে শুরু করলাম।
এগিয়ে এসে, পীঠে হাত বোলােত লাগলেন যীশু! এটুকুই।
তারপর খুব চুপচাপ হয়ে গেলেন।
নৈশ-পায়চারির জন্য গাজা উপত্যকার সবচেয়ে অপ্রচল রাস্তাগুলোই বেছে নিয়েছিলাম আমরা।
খুবই বিব্রত আর কুণ্ঠিত লাগছিলো তাকে।
দুপাশে খেজুর ও জয়তুন গাছের সারি।
অদূরেই চলমল করছে নোয়ার প্লাবন।
পথে পথে কাঁটাতার, পথে পথে 'নো-এন্ট্রি'।
পৃথিবীর পঞ্জিকায় একুশ শতকের এক ফেব্রুয়ারি এগিয়ে চলেছে মার্চের দিকে।
 আমাদের পদচারণায় তেমন কোনো শব্দ ছিলো না, শরীরে হামাসের গন্ধ নেই,
এমনকি, ইজরায়েলি সেনা-পোষাকও নয়;
অথচ পথ থেকে একটু বিচ্যুত হয়ে একটা খেজুরতলায় দাঁড়াতেই
ঊর্ধশ্বাসে দৌড়ে পালালো কয়েকটা গজলা হরিণ।
যীশু বিষণ্ন হলেন। পশ্চিম তীরের এই আচানক রাত্রিতে, লক্ষ করলাম,
দক্ষিণ-পশ্চিমে, মিশর সীমান্তের দিকে মুখ রেখে উদাস তাকিয়ে আছেন মহান প্রভূ;
একদা যিনি পশুপাখিদের ভাষা বুঝতেন। কিংবা, হতে পারে, এখনও বোঝেন। -
 'প্রকৃতির আশীর্বাদ সেই ফিলিস্তিন, দেখুন প্রভূ, পৃথিবীর দৈনন্দিন গোরস্তান।
দুনিয়ার আর কোথাও এতো শিশুর অপমৃত্যু ঘটেনি।
মহান যীশু, অাপনি জানবেন, এরই মধ্যে কয়েক হাজার কবরের ওপর দিয়ে হেঁটেছি আমরা।'
 জবাব দিলেন না। একটৃ কেঁপে উঠলেন। আমার কথায় নাকি ফেব্রুয়ারির শীতে, বোঝা গেল না।
মিনিট দশেক নীরব, যেন নিষ্প্রাণ, ক্রসবিদ্ধ হয়ে রইলেন।
তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস___ - 'চলুন, ফেরা যাক!'
আমার পক্ষে জেরুজালেমে ফেরা অসম্ভব।
স্বপ্নের মধ্যেও স্তম্ভিত, কিংকর্তব্যবিমূঢ় আমি।
কোথায় ফিরবো অনুতপ্ত যীশুকে নিয়ে? ওবামা স্কেজিউল দিতে পারবে না।
আর তাছাড়া... সমকামিতায় আমারও সায় নেই।

No comments:

Post a Comment

Pages (17)1234 Next