By Robin Ahsirt
তিমিরের মনটা আজ খুব খারাপ।আজ ওর জন্মদিন কিন্তু ওর জন্মদিনে আজ কোন অনুষ্ঠান হবে না।কারন ওর জ্বর।একটু আধটু না ১০৪।তিমিরের বয়স অনুযায়ী বুদ্ধিটা মানানসই না।বয়স তো আট বছর কিন্তু আঠারো বছর বয়সীদের থেকেও বেশী বুদ্ধি।অকালপক্ক নয় তবে হ্যাঁ বুদ্ধি ঠিকই আছে।তিমির শুয়ে আছে তার বিছানায়।তার ঘরটা খুব্বই সুন্দর।পায়ের কাছে বারান্দা।বিশাল একটা কাঁচের দরজা।ওখান থেকে সুন্দর নীল আকাশ,পাখি সবই দেখতে পারে।পাখির কিচিরমিচির শুনতে খুব ভাল লাগে তিমিরের।সবচেয়ে ভাল লাগে বৃষ্টি।কি সুন্দর রিমঝিম রিমঝিম বৃষ্টি হয়।ওদের ক্লাসে একটা মেয়ে আছে বৃষ্টি।বেজায় পাজি।বৃষ্টির মত স্নিগ্ধ না।এক্কেবারে সাইক্লোন ওয়ালা বৃষ্টি।খুব জ্বালায়।বড় হলে সে আর যাই হোক বৃষ্টির মত মেয়েকে বিয়ে করবে না।
তিমিরের জানালার দিকে তাকিয়ে কাঁদতে ইচ্ছা করছে।সামনের গাছটার পাখির বাসায় যে চড়াই গুলো থাকে ওগুলোর কত্ত সুখ।কখনো অসুখ হয় না।সবসময় নীল আকাশে উড়ে বেড়ায়।সারাদিন বাবা মা দেখে দেখে রাখে।তিমিরের বাবার মত নয় যে সারাদিন বাইরে বাইরে ঘুরবে।আজ অবশ্য দুজনই আছেন।ছেলের আকাশপাতাল জ্বর।কখন কি হয়ে যায় বলা যায় না।তার উপরে জন্মদিন।এখন ছেলের পাশে না থাকলেই নয়।তবে তিমির জানে না ওর বাবা মা ওর জন্য একটা পার্টি দিয়েছেন।সন্ধ্যায়।সব বন্ধুরা আসবে।আত্নীয়রা আসবে।রাতে সবাই থাকবে।তিমিরদের বাড়িটা খুব বড়।সবার থাকতে কোন অসুবিধাই হবে না।
তিমির এসবের কিচ্ছু জানে না।ওর এবছর কোন উপহার পাওয়া হবে না বলে মন খারাপ।আকাশে মেঘ করেছে আবার।ঘন কালো মেঘ।মনে হয় খুব বৃষ্টি হবে।তিমিরের খুব কান্না পাচ্ছে ওর জন্মদিনেই কেন এমন হয়।কাঁদতে কাঁদতেই ঘুমিয়ে পড়ল তিমির।
ঘুম ভাঙল খুব ডাকাডাকিতে।তিমিরের কোনভাবেই চোখ খুলতে ইচ্ছা করছিল না।তাও কষ্ট করেই চোখ খুলল।চোখ খুলেই অবাক হল।এ যে হীরুচাচা।
কি রে ব্যাটা আর কত ঘুমাবি।জন্মদিনে কেউ এত ঘুমায় নাকি?গাধা জন্ম মানেই উঠে যাওয়া।দেখিস না জন্ম হলেই বাচ্চাগুলো কেমন গগনবিদারী কান্না করে বাড়ি মাথায় তোলে।তোকেও ওরকম বাড়ি মাথায় করতে হবে।
তিমির অবাক হয়ে হীরুচাচার কথা শুনছে।বুঝতে পারছে না হীরুচাচা কোথা থেকে এসেছে।তিনি তো গতবছরই লন্ডনে চলে গিয়েছিলেন।
তিমির!কি রে বাবা!তুই এখনো উঠিস নি?ওঠ ওঠ।জলদি ওঠ।
তিমির পুরোই স্তব্ধ হয়ে গেল অরুমামীকে দেখে।ওরুমামী আবার কোথা থেকে।অরুমামী থাকেন তো সিলেটে।
কিছুক্ষন বাদেই তিমিরের নানা নানী দাদা দাদী সবাই এসে তাগাদা দিল তিমিরকে উঠতে।কিন্তু তিমির উঠল না।ওর যে বেজায় জ্বর।উঠলে কালকের মত আবার পড়ে যাবে।আবার ব্যাথা পাবে।সেই ভয়েই উঠছে না।
কিছুক্ষন বাদে তিমিরকে অবাক করে দিয়ে রমিজমামা চলে এলো।রমিজ মামা তিমিরের ছোটমামা।এডভেঞ্চারের বেজায় শখ।কখন কোথায় থাকে কেউ জানে না।রমিজমামা কোথা থেকে এলেন!তবে রমিজমামার উপর তিমিরের বেজায় রাগ।গতবার মামা কথা দিয়েছিলেন আসবেন।আসেন নি।এবার এসেছেন।কথা বলবে না ভালমত ঠিক করল তিমির।যদিও রমিজ মামাকেই তিমির সবচেয়ে ভালবাসে তাও গোমড়া মুখেই বলল
আমি উঠবো না।আমার জ্বর।
কি রে ব্যাটা।এই বয়সে আমরা জ্বরকে নখে রেখে চলতাম আর তুই জ্বরকে ভয় পাচ্ছিস?
না মামা আমি উঠবো না।
তোর বন্ধুরা অপেক্ষা করছে।
করুক।
মামা একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন।তারপর বাথরুমে গিয়ে টাবে পানি ভরলেন।তিমির কৌতুহলী চোখে সব দেখছে।তারপর এসে বললেন ঠিক করে বল উঠবি কি না।
না উঠব না।
মামা আবার দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন।তারপর তিমিরের দিকে তাকালেন।চোখের পলকেই তিমিরকে কোলে তুলে নিয়ে বাথটাবে ফেলে দিয়ে এলেন।
মামা কি করলে এটা।আমার জ্বর তো।
রাখতো তোর জ্বর।এ বয়সে জ্বরে কাবু।বৃষ্টি হলে তোকে বৃষ্টিতেই ভেজাতাম।বৃষ্টি হল জ্বরের মহা ঔষধ।
বৃষ্টিতে হচ্ছে।
নাহ।আকাশ ফকফকা।
তাহলে বৃষ্টি শেষ।।
তিমিরকে মামা গোসল করালেন।মাথা আঁচড়ে দিলেন।তিমিরকে নতুন জামা দিলেন।তিমিরের সব রাগ পানি।
শোন।তোর জন্য অনেক বড় পার্টি দেয়া হয়েছে।আমরা সবগুলো এসেছি।তোর বন্ধুরাও এসেছে।এই বলেই তিমিরের মুখে মামা থার্মোমিটার ঢুকিয়ে দিলেন।তিনি বকর বকর করছেন তো করছেন।সবাই কত কি এনেছে তোর জন্য জানিস?তোর বাবা মা তোর জন্য বস্তা বস্তা বই কিনেছেন।তোর দাদু পুরো মিষ্টির দোকানই কিনে এনেছেন।সবাই এত এত উপহার এনেছে।দেখি জ্বর তো নেমে গেছে।দেখেছিস পানিই হল মহাওষুধ।যা বলছিলাম।তোদের বসার ঘরটা এত্ত সুন্দর করে সাজিয়েছে না।আমারই রীতিমত হিংসে হচ্ছে।আমাদের সময় তো আমাদের জন্ম তারিখটাও কেউ মনে রাখত না।
মামা একটু নিচে গিয়ে দেখে আসি।
পাগল?সারপ্রাইজ না?
:সারপ্রাইজ তো সব বলেই দিলে।
:তো?দেখাই তো আর নি।দেখলে চোখ ছানাবড়া হয়ে যাবে।
:যাই না মামা প্লিজ
:না
:মামা আজ আমার জন্মদিনে এই আবদারটুকুও রাখবে না?
:উফ্।সব জ্বালা হয়েছে আমার!আচ্ছা ঠিকাছে।একবারই কিন্তু
তিমির হামাগুড়ি দিতে দিতে বসার ঘরের দরজায় এসে থামল।উঁকি মারতেই চমকে উঠল।সব্বাই আছে ওখানে।তিমিরের জন্য এতবড় কেক,গিফট আর কত কি!সব ওর।আর থাকল না।চলে এলো ঘরে।এসে মামাকে ঘরে আর দেখল না।কোথায় গেছে কে জানে!
তিমির আজ খুব খুশি।এত কিছু করে রেখেছে বাবা মা।কত ভাল ওরা।তিমির শুধু শুধুই রাগ করছিল।তিমির বারান্দায় এসে দাঁড়ালো।কি সুন্দর আকাশ।পাখির বাসায় পাখিগুলো ফিরেছে।তিমির ভাব জমানোর ভঙ্গিতে কথা শুরু করল।
:বুঝলে আজ আমার জন্মদিন।নিচ কত্ত উপহার আমার জন্যে।
:তিমির তিমির
তিমির অবাক হল।পাখিগুলো অবিকল মানুষের গলায় কথা বলছে।
:তিমির তিমির।তোমার কত মজা তোমার জন্মদিন।আমাদের জন্মদিন নেই।
এবার ভয় পেল তিমির।উল্টো ঘুরতে গিয়ে পড়ে গেল।
চমকে ঘুম ভাঙল তিমিরের।চোখ খুলে দেখল হীরুচাচা ডাকছে।অবাক হল।জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো।ধুমসে বৃষ্টি হচ্ছে।
কি রে ব্যাটা আর কত ঘুমাবি?জন্মদিনে কেউ এত ঘুমায়?
No comments:
Post a Comment