Monday, 7 October 2024

ড ইউনুসের রিসেট বাটন নিয়ে ফ্যাসিবাদীদের প্রপাগান্ডা

 ড. ইউনূসের "রিসেট বাটন" পুশ করার বক্তব্য নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসররা।


আসুন দেখি রিসেট বাটন পুশ করা বলতে কী বুঝিয়েছেন ড. ইউনূস।


সম্প্রতি ভয়েস অব আমেরিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে উপস্থাপক প্রশ্ন করেন, “অনেকেই বলছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তারা ফ্যাসিবাদের আইকন হিসাবে দেখছেন। দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের জাতির পিতা হিসাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বীকৃত। এ ব্যাপারে আপনার সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি কী?”



কিন্তু মুহাম্মদ ইউনূস উপস্থাপকের এই প্রশ্নের সরাসরি কোনো উত্তর দেননি।


উত্তর না দিয়ে বরং উপস্থাপককে বলেন, “আপনি পুরোনো দিনের কথাবার্তা বলছেন। এর মাঝে একটা গণঅভ্যুত্থান হয়ে গেল। আপনার বোধহয় স্মরণে নেই। আপনি এমনভাবে কথা বলছেন, যেন এসব ঘটনা ঘটেইনি। নতুন ভঙ্গিতে যা হচ্ছে, সেটিকে দেখতে হবে তো।”


“কত ছেলে প্রাণ দিলো, সেটা নিয়ে আপনার কোনো প্রশ্ন নেই। কেন প্রাণ দিলো?” তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন।


এর পরেই তিনি বলেন, “প্রথম স্বীকার করতে হবে যে ছাত্ররা বলেছে, আমরা ‘রিসেট বাটন’ পুশ করেছি; সবকিছু শেষ; অতীত নিশ্চিতভাবে চলে গেছে। এখন নতুন ভঙ্গিতে আমরা গড়ে তুলব। দেশের মানুষও তা চায়। সেই নতুন ভঙ্গিতে গড়ে তোলার জন্য আমাদের সংস্কার করতে হবে।”


‘রিসেট বাটন’ প্রসঙ্গে আলোচনার সূত্রপাত তার এই মন্তব্য ঘিরেই।


"রিসেট বাটন" পুশ করা বলতে ড. ইউনূস কখনোই বাংলাদেশের গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, বাংলার ঐতিহ্য, সংস্কৃতিকে মুছে ফেলার কথা বোঝাতে চাননি। তিনি যে রিসেটের কথা বলেছেন, তা আসলে ৫ আগস্টের ঘটনার মাধ্যমে গত ১৫ বছর ধরে চলে আসা ফ্যাসিবাদী শাসন ও নির্মম দমননীতির অবসানকেই নির্দেশ করে।


গত ১৫ বছর ধরে আওয়ামীলীগ নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সোল এজেন্ট বানিয়ে দেশটাকে নিজের বাপের সম্পত্তি মনে করে এক ভয়াবহ অবস্থা তৈরী করেছিল। মানুষের কোন বাক স্বাধীনতা ছিলনা। দেশজুড়ে বিরুদ্ধ মতের মানুষদের গুম করা হয়েছে, বিরোধী নেতাকর্মীদের বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছে। সারা দেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে রাখা হয়েছিল, চাঁদাবাজির মহোৎসব চলেছিল। সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ ছিল, উন্নয়নের নামে মেগা প্রকল্প তৈরী করে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা লুটপাট করে বিদেশে পাচার করা হয়েছিল, রিজার্ভ খালি করা হয়েছিল— এই সবকিছুই আওয়ামী লুটেরাদের সময়ের বাস্তব চিত্র। সরকারি দপ্তরগুলোতে ঘুষ ও দুর্নীতির চক্র তৈরি হয়েছিল, সাধারণ মানুষের ভূমি দখল এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল ছিল একটি সাধারণ ঘটনা। মোট কথা দেশে তখন আওয়ামী জাহেলিয়া যুগ কায়েম করা হয়েছিল।


ড. ইউনূস যখন "রিসেট বাটন" পুশ করার কথা বলেছেন, তিনি মূলত আওয়ামী ফ্যাসিবাদী যুগের অবসানকেই নির্দেশ করেছেন। 

তার ভাষায়, এই রিসেট বাটনের মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণ তাদের জীবন থেকে অস্বাভাবিকতা, দমননীতি, এবং ভীতির পরিবেশ দূর করে একটি স্বাভাবিক, সুস্থ, এবং সুন্দর জীবনের প্রতিশ্রুতি পেয়েছে। ড. ইউনূস মানুষের মনে নতুন আশার সঞ্চার করেছেন—একটি অন্ধকার যুগের সমাপ্তি ঘটেছে, সামনে রয়েছে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। তিনি দৃঢ়ভাবে বলেছেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদ বিদায় নিয়েছে এবং আর কখনো ফিরে আসবে না। রিসেট বাটনের চাপেই ফ্যাসিবাদের নির্মম দাপট ইতিহাসের গর্ভে বিলীন হয়েছে, আর এই বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের কোনো স্থান নেই। পুরনো গ্লানি মুছে দিয়ে নতুনভাবে জাতিকে গড়ে তোলার অঙ্গীকার করেছেন তিনি।


এই বক্তব্য ফ্যাসিবাদের রক্ষকদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। তারা কখনোই কল্পনা করেনি যে তাদের তথাকথিত "আওয়ামী জাহেলিয়া যুগ" এত দ্রুত শেষ হয়ে যাবে। ছাত্র জনতা যখন একযোগে রিসেট বাটন পুশ করে তাদের অন্যায়, নিপীড়নমূলক শাসন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে, তখন তাদের ক্ষমতা ধরে রাখার সব পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়ে যায়। এখন তারা বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে, মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে এবং গুজব রটাচ্ছে, যাতে দেশের মানুষকে আবারো অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দেওয়া যায়। 


তবে, জনগণকে সতর্ক থাকতে হবে এবং ফ্যাসিস্টদের অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়ে তাদের ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত করতে সদা প্রস্তুত থাকতে হবে। ঐক্যবদ্ধ জনগণই এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম হবে, এবং এই বাংলাদেশে আর কখনোই ফ্যাসিবাদ ফিরে আসতে পারবে না।


জিয়া চৌধুরী, চট্টগ্রাম।


Monday, 23 September 2024

ফিরে দেখা: জুলাই-আগস্টের সরকার পতন আন্দোলন

জুলাই-আগস্টের আন্দোলন নিয়ে আজ বিভিন্নজন নানা কৃতিত্ব দাবি করার চেষ্টা করছে। কিন্তু এই কৃতিত্ব দাবি করা আন্দোলনের প্রকৃত চেতনার সাথে মানানসই নয়। কারণ, সরকার পতনের এই আন্দোলনে কোনো ব্যক্তি বা দলের একক অবদান নেই। এমনকি ছাত্রদেরও এককভাবে এই আন্দোলনের কৃতিত্ব দেওয়া যায় না। আন্দোলনের সবচেয়ে সংকটময় মুহূর্তে সমাজের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছাড়া এই আন্দোলন কখনই সফল হতো না।



যে নারী রান্না করে রাস্তায় আন্দোলনকারীদের খাওয়াতেন, তিনি কোনো দলের ছিলেন না। যে রিকশাচালক ছাত্রদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বজ্রমুষ্ঠি উঁচিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন, তিনি কোনো দলের ছিলেন না। যে বয়স্ক বাবা নিজের ছেলের পিছু পিছু রাস্তায় নেমে এসে অন্য অভিভাবকদের রাস্তায় নামার আহ্বান জানাচ্ছিলেন, তিনিও কোনো দলের ছিলেন না। মিরপুর বা যাত্রাবাড়ীতে যে হাজারো জনতা বুক পেতে দিয়েছিল ঘাতকদের বুলেটের সামনে, তাদের রাজনৈতিক পরিচয় ছিল না। যে সাহসী সাংবাদিক বুলেটের ঝড়ের মাঝেও আন্দোলনের দৃশ্য ধারণ করে তা ছড়িয়ে দিচ্ছিলেন, তারও কোনো দলীয় পরিচয় ছিল না। এমনকি যারা বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে সকলকে রাস্তায় নামার আহ্বান জানিয়েছিল, তাদেরও সে দিন কোনো দলীয় পরিচয় ছিল না।


এই আন্দোলন ছিল ছাত্র জনতার। সকল শ্রেণি ও পেশার মানুষ একসঙ্গে রাস্তায় নেমে এসেছিল বলে এই আন্দোলন সফল হয়েছে। এ সত্য সবার জানা। জাতীয় পার্টি, কিছু বাম সংগঠন এবং আওয়ামী মহাজোটের দলগুলো এই আন্দোলনে যোগ দেয়নি, বরং বিরোধিতা করেছিল। তবে জামায়াত, বিএনপি, এবি পার্টি, গণ অধিকার পরিষদসহ অন্যান্য দলগুলো সক্রিয়ভাবে এতে অংশ নিয়েছিল। কিন্তু সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিল সাধারণ ছাত্র জনতা, তাদের অংশগ্রহণেই এই বিপ্লব সফল হয়েছে।


আন্দোলন চলাকালে আমি আসিফ মাহমুদ এবং নাহিদকে বেশি ফলো করতাম। বাকিদের চিনেছি পাঁচ আগস্টের পর। দেশের নেট সংযোগ বন্ধ থাকায় যারা বিদেশে ছিলেন, যেমন পিনাকী দা, জাওয়াদ নির্ঝর, ইলিয়াস হোসেন, এবং জুলকারনাইন শায়ের—তাদের আইডি ফলো করতাম। তাদের দেয়া তথ্যগুলো থেকে বুঝতাম দেশের পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে, যদিও পুরো চিত্র পাওয়া যেত না।


আমাদের এবি পার্টির ঢাকা ও সারাদেশের কেউই ঘরে বসে ছিলেন না। প্রতিদিন কর্মসূচি ছিল আন্দোলনের দিনগুলোতে। ব্যারিস্টার ফুয়াদ ভাইয়ের জ্বালাময়ী বক্তৃতা লাখো মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছিল। এডভোকেট তাজুল ভাইয়ের নেতৃত্বে আইনজীবী দল প্রতিদিন আদালতে গিয়ে গ্রেপ্তার হওয়া ছাত্রদের জামিনের জন্য লড়াই করছিলেন। আমি দেখেছি আলী নাসের খান ভাই রাত জেগে ব্যানার-ফেস্টুন তৈরি করে দিচ্ছিলেন ছাত্রদের জন্য। ছাত্রপক্ষের আহ্বায়ক মুহাম্মদ প্রিন্স আন্দোলনের সম্মুখ যোদ্ধা ছিলেন। এবি পার্টির সদস্য সচিব মঞ্জু ভাইসহ অনেক নেতা-কর্মী মিছিলে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। মঞ্জু ভাইকে পরে গ্রেপ্তার করা হয়, পাঁচ দিনের জন্য রিমান্ডেও নেয়া হয়েছিল। 


আমার নিজের আইডি থেকে লিখতে পারছিলাম না। তখন আরব আমিরাতে ৫৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। আমাদের আইডিগুলো নজরদারিতে ছিল। আন্দোলনের পক্ষের রাজনীতিবিদ, সাংবাদিকদের তালিকা দেওয়া হয়েছিল দুবাইয়ের পুলিশকে। তারা অনেককেই তুলে নিয়ে যাচ্ছিল, কাস্টডিতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করছিল। আমাদের বাংলাদেশ প্রেস ক্লাব ইউএইর অনেক সদস্য এসব ফেস করছিলেন, বেশ কিছুদিন পুলিশ কাস্টডিতে থাকতে হয়েছিল একজন সিনিয়র সাংবাদিককে। সেই সময় আমি ফেইক আইডি দিয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিভিন্ন গ্রুপে লিখতাম। নিজের আইডি থেকে ইন্টারনাল গ্রুপগুলোতে বিভিন্ন পরামর্শ দিতাম, যেগুলো পরে কপিপেস্ট হয়ে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়তে দেখেছি। মাঠেও সেই পরামর্শগুলোর বাস্তবায়ন দেখেছি।


এভাবেই সবাই মিলে, সকলের পরামর্শ, অংশগ্রহণ ও সহযোগিতায় এই আন্দোলন চূড়ান্ত সফলতা অর্জন করেছে। এখানে কারো একক কৃতিত্বের কোনো সুযোগ নেই। কোনো দল বা ব্যক্তি এককভাবে এই আন্দোলনের সাফল্য দাবি করতে পারে না। বিপ্লব সফল হয়েছে সবার সম্মিলিত প্রয়াসেই।

Wednesday, 4 September 2024

রাষ্ট্র সংস্কারের রুপরেখা প্রণয়নে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমত জরুরী

ক) গণবিপ্লবে সরকার পতনের পর ফ্যাসিষ্ট বিরোধী সকল রাজনৈতিক দলের প্রধানদের দলের উচিত ছিল রাষ্ট্র সংস্কারের পরিকল্পনা করতে একটা যৌথ সভা করা। 


যেহেতু গণমানুষের বৈপ্লবিক সংগ্রামে অগণিত শহীদের তাজা রক্তের বিনিময়ে, লাখো লাখো কারা নির্যাতিত, নিপীড়িত, পঙ্গুত্ব বরণকারী বিপ্লবী বীরদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে গড়ে উঠা এই নতুন বাংলাদেশ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নতুন রাষ্ট্র গঠন নিয়ে একটি বোঝাপড়ার দরকার ছিল।


রাষ্ট্রের কার্যক্রম স্বাভাবিক ও গতিশীল করতে, আইন শৃংখলা ফিরিয়ে আনতে, প্রশাসনকে সক্রিয় করতে, সংবিধান পূর্ণগঠন করতে, রাষ্ট্রকে কল্যানমূখী করতে একটা যৌথ অঙ্গীকারপত্র প্রণয়ণ করে সকলের ঐক্যমত হওয়া জরুরী ছিল।


তা না করে, পুরোনো গৎবাঁধা রাজনৈতিক কালচারে ফিরে গিয়ে বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলো ছাত্র জনতার বিপ্লবী চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক পন্থা অনুসরণ করছে। যার ফলে সাধারণ জনতা রাজনৈতিক দলগুলোর এসকল আচরণকে যার যার অবস্থান থেকে প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছে। 


এর ফলে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া, সমঝোতা, ঐক্যমত প্রতিষ্ঠা হওয়ার বদলে অবিশ্বাস, সন্দেহ কাদা ছোড়াছুড়ি শুরু হয়েছে। যার পরিণতিতে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, সংঘর্ষ অনিবার্য।


এখনও পর্যন্ত ফ্যাসিবাদীরা ঘাড়ের উপর বিশ নিশ্বাস ফেলছে। সাধারণ মানুষ এখনও নির্ভার নিশ্চিন্তে চলা শুরু করতে পারেনি। তার মধ্যে রাজনৈতিক এই নতুন অস্থিরতা রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যাপারে ছাত্র জনতার নিকট ভুল বার্তা প্রেরণ করছে।


বিএনপি, জামায়াত, এবি পার্টি, গণ অধিকার পরিষদ, জাতীয় পার্টি ও ইসলামী দলগুলো সহ রাজপথে সক্রিয় থাকা রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দরা রাষ্ট্রগঠনের প্রশ্নে এক টেবিলে বসা খুবই জরুরী।


রাজনৈতিক দলগুলো নতুন বাংলাদেশ গড়ার ব্যাপারে যৌথভাবে একমত হয়ে অঙ্গীকারপত্রে স্বাক্ষর করতে হবে। পারস্পরিক দ্বন্দ্ব, অবিশ্বাস সন্দেহ, কাদা ছোড়াছুড়ির জায়গা থেকে সরে আসতে হবে।


আগামীতে দল হিসেবে ক্ষমতায় থেকে বা বিরোধী দলে থেকে সকল প্রকার দূর্নীতি, লুটপাট, অন্যায়, জুলুম, প্রতিহিংসা, সংঘাত বন্ধে রাজনৈতিক চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করতে হবে। 


নিজ নিজ দলের ভিতর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সবাইকে একমত হতে হবে।


আমরা চাইনা নতুন কারো হাত ধরে, নতুন কোন রুপে ফ্যাসিবাদ ফিরে আসুক। আমরা একটা উন্নত, সমৃদ্ধ, কল্যানমূখী বাংলাদেশ চাই। আমরা স্বাধীনভাবে বাঁচতে চাই, মত প্রকাশের স্বাধীনতা চাই, হয়রানীর অবসান চাই, গুম খুন থেকে মুক্তি চাই। 


আমাদের সকলের সদিচ্ছা ও আন্তরিক মনোভাব থাকলে এই বাংলাদেশ একদিন বিশ্বের দরবারে তার গৌরব ও মর্যাদা নিয়ে অবশ্যই মাথা উচু করে দাড়াবে।


খ) রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর যৌথ অঙ্গীকারপত্রের পয়েন্টগুলো নিম্নরূপ হতে পারে:


1. **গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠা ও রক্ষা**:

 সকল রাজনৈতিক দল গণতন্ত্রের মূল্যবোধ ও প্রক্রিয়া মেনে চলবে এবং যে কোনো ধরনের স্বৈরাচারী শাসনের পুনরুত্থান প্রতিরোধে একসাথে কাজ করবে।


2. **শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান**: 

রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও, সকল দল পারস্পরিক সম্মান বজায় রেখে শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করবে এবং সহিংসতা বা সংঘাতের পথে যাবে না।


3. **দূর্নীতির বিরুদ্ধে অঙ্গীকার**: 

দূর্নীতি, লুটপাট, এবং ক্ষমতার অপব্যবহার বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। কোনো দল বা ব্যক্তির বিরুদ্ধে দূর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেলে তাকে আইন অনুযায়ী শাস্তি প্রদান করা হবে।


4. **আইনের শাসন ও বিচারব্যবস্থা স্বাধীনতা**: 

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষা করা হবে এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সকল দল সম্মত হবে। কেউ আইন ঊর্ধ্বে নয়, এই নীতি সর্বদা অনুসরণ করা হবে।


5. **সংবিধান পুনর্গঠন ও সংস্কার**: 

একটি নতুন সংবিধান বা বিদ্যমান সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হবে, যাতে গণমানুষের অধিকার এবং স্বাধীনতা সুরক্ষিত থাকে।


6. **মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ**: 

সকল নাগরিকের মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হবে এবং এ বিষয়ে যে কোনো ধরনের বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করা হবে।


7. **গণমাধ্যমের স্বাধীনতা**:

 গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষা করা হবে, যাতে তারা নিরপেক্ষভাবে তথ্য প্রকাশ করতে পারে এবং গণমানুষের কণ্ঠস্বর হতে পারে।


8. **অধিকার ও ন্যায়বিচারের জন্য প্রতিশ্রুতি**:

 মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়া হবে এবং যেকোনো অপরাধের শিকার ব্যক্তি ন্যায়বিচার পাবেন।


9. **বৈষম্যহীন সমাজ গঠন**:

 সকল ধরনের বৈষম্য—জাতিগত, ধর্মীয়, লিঙ্গভিত্তিক বা সামাজিক—অপসারণের লক্ষ্যে কাজ করা হবে এবং একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠন করা হবে।


10. **জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা**: 

দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য একটি যৌথ জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরি করা হবে, যা স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অবকাঠামো, এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের মতো বিষয়গুলিতে গুরুত্ব দেবে।


11. **ফ্যাসিবাদ বিরোধী ঐক্য**: 

যেকোনো ধরনের ফ্যাসিবাদী চিন্তা ও শক্তির বিরুদ্ধে সকল দল একত্রে দাঁড়াবে এবং তা প্রতিরোধে সক্রিয় থাকবে।


12. **শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য সহযোগিতা**

 দেশকে রাজনৈতিক অস্থিরতা থেকে মুক্ত রাখার জন্য সব দল শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহযোগিতা করবে।


এই ধরনের পয়েন্টগুলো অঙ্গীকারপত্রে অন্তর্ভুক্ত করলে, রাজনৈতিক দলগুলো একটি সংহত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের জন্য একসঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে পারে।


জিয়া চৌধুরী,

চট্টগ্রাম থেকে।



Friday, 9 September 2022

আলো আসবেই

আলো আসবেই


সেই অন্ধকারের সীমাহীন গভীরে তাকিয়ে

দীর্ঘক্ষন সেখানে দাঁড়িয়ে, ভাবছিলাম, ভয়ে,


ইতস্ততভাবে, 

কিন্তু মৃত নই, স্বপ্নের ভিতর দেখা কোন স্বপ্নে

যখন স্বপ্ন দেখার মত কিছুটা সাহসী হয়েছি।


অথচ নীরবতা তখনো ভাঙ্গেনি,

এবং নিস্তব্ধতাও কোন টোকা দেয়নি।


তারা কেবল একটা শব্দই বলেছিল

ফিসফিস করে, "আলো আসবেই!"


আমিও ফিসফিসিয়ে প্রতিধ্বনির সাথে

বিড়বিড় করে বললাম, "আলো আসবেই!"


 শুধু এটুকুই, আর কিছু না।


🌹🌹🌹 বাংলাকরণ- জিয়া চৌধুরী।


--------------------------------------

এডগার এলান পো'র The Raven কবিতার আংশিক বাংলাকরণ।

Monday, 6 December 2021

মাথায় পচন জনিত অপারেশন

 এই যে অশ্লীল বাক্যবোমা, আর শিশ্নের বাহাদুরি দেখানোর

প্রবল আকাঙ্ক্ষা, খোঁজ নিয়ে দেখ, 

তাদের সবার শিশ্নেই একই তাড়না। 

মস্তিস্ক জুড়ে বীর্যের ভান্ড নিয়ে ঘুরে বেড়ায়, 

আর রমন করে চলে স্টেটকে প্রতিদিন 

সামনে আর পেছন থেকে।


পায়ের আঙ্গুল থেকে শুরু হওয়া পচন  

পৌঁছে গিয়েছে ঠিক মাথা পর্যন্ত,

অনিবার্য হয়ে উঠেছে চুড়ান্ত ব্যবচ্ছেদ, ঘুমন্ত ডিপ স্টেট ডক্টর

কি জেগে উঠবে? অপারেশন টেবিলে ছুরি কাঁচি হাতে,

থিয়েটারের বাইরে উৎসুক ক্রোড় জনতা।

পুবে উঁকি দিচ্ছে নতুন প্রাত, দিগন্ত ছেঁয়ে আছে লালিমায়।

Friday, 26 November 2021

আজরাইলের হাঁসি

আর কতকাল পেরিয়ে গেলে পুর্ণ হবে মনের আশা?

আর কতটা প্রাণ নিলে মিটবে তোদের রক্তনেশা?


সড়ক কবে নিরাপদে চলার মত যোগ্য হবে?

আর কতজন অকাতরে গাড়ির তলে জীবন দেবে?


রাস্তাঘাটে নয়তো মানুষ, যেন গরু ছাগল চরে

ট্রাক বাসের ড্রাইভারেরা মনের সুখে মানুষ মারে।


সড়কগুলো সবকটিতে আজরাইলের অট্টহাসি,

রোম পুড়ে ছাই হয়ে যায়, নিরো কেবল বাজায় বাঁশি।


==========

জিয়া চৌধুরী

চট্টগ্রাম।

Saturday, 16 October 2021

পাই নেটওয়ার্ক – ভবিষ্যতের আরেকটি বিটকয়েন!

পাই নেটওয়ার্ক – ভবিষ্যতের আরেকটি বিটকয়েন!

স্মার্টফোনে ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইনিং করা সব সময়ের জন্য অসম্ভব ছিল। যাহোক, পাই নেটওয়ার্ক চালু হওয়ার সাথে সাথে কন্সেপ্ট টা এখন বদলে গেছে। একমাত্র পাই নেটওয়ার্ক Pi network দ্বারাই সম্ভব স্মার্টফোনে ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইনিং করা, যা একটি ফ্রী মাইনিং অ্যাপ স্মার্টফোনের জন্য।

পাই (Pi) কি?

পাই হচ্ছে একটি নতুন ক্রিপ্টোকারেন্সি যা স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির পি.এইচ.ডি অর্জনকারী কিছু শিক্ষার্থীরা মিলে উদ্ভাবন করেছে। এই বিপ্লবী নতুন ক্রিপ্টোকারেন্সি বিশ্বে খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এবং এটি আপনাকে ধনীও করতে পারে! এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্প যার সাফল্য তার গ্রাহকদের সম্মিলিত অবদানের উপর নির্ভর করে।

ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলোর মত এটিও ডিজিটাল অর্থের নতুন রূপ যা সরকার বা ব্যাংকগুলির পরিবর্তে নির্দিষ্ট একটি গ্রুপ দ্বারা নিয়ন্ত্রণ, রক্ষণ ও সুরক্ষিত থাকে। এই ক্রিপ্টোকারেন্সি সুরক্ষিত এবং এর নেটওয়ার্ক বাড়ানোর মাধ্যমে আপনিও পাই মাইনিং করতে পারবেন। ব্যবহারকারীরা ইতিমধ্যে তাদের বন্ধু এবং পরিবারের মধ্যে এর প্রসার ঘটাচ্ছে যার কারণে খুব অল্প সময়ে এটি বিশ্বে ১ কোটির ও বেশী ব্যবহারকারী সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছে। 

এর আরেকটি কারণ হচ্ছে, বেশিরভাগ ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলি (বিটকয়েনের মতো) প্রতিদিন মানুষের ব্যবহার এবং অ্যাক্সেসের জন্য কঠিন। যদিও পাই নেটওয়ার্ক একদম হাতের মুঠোয়।

এই অ্যাপটি কিভাবে কাজ করে? আমি কীভাবে বেশী পাই উপার্জন করবো?

প্রথমত, Google Play Store বা App Store থেকে Pi Network সার্চ করে বা https://minepi.com/nmziaul লিংকে গিয়ে ডাউনলোড করে নিন। তারপর Country>Bangladesh (+880) সিলেক্ট করে সাইন আপ করে নিন। পাসওয়ার্ড সেট করার পরে নাম দিতে বলবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার পাসপোর্টের নাম ব্যবহার করতে হবে, যাদের Passport নেই তারা যে নামে Passport বানাবেন ঐ নাম ব্যবহার করবেন। 




Name এবং Username সেট করার পরে Invitation Code দিতে বলবে, সেক্ষেত্রে NMZIAUL এই কোড টি ব্যবহার করুন। 

এবার আসি মূল কথায়, এই অ্যাপটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঘন্টায় একটি নির্দিষ্ট রেট অনুযায়ী কাজ করবে তা থেকে উপার্জন হবে। তবে যত বেশী ব্যবহারকারী সংগ্রহ করতে পারবেন তত বেশী বাড়তি রেটে উপার্জন করতে পারবেন। পাই উপার্জন করার জন্য প্রতি ২৪ ঘন্টা পর পর অ্যাপের লাইটনিং  বা বজ্রের মত বাটন টি চালু করে দিতে হবে। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্প বর্তমানে ১ কোটির ও বেশী ব্যবহারকারী নিয়ে মাইনিং অবস্থায় আছে। এই অ্যাপের ১০ কোটি ব্যবহারকারী হলে মাইনিং বন্ধ হয়ে যাবে এবং বাজারে USD/EUR/GBP উপর এর মান নির্ধারণ হবে।