" আমি তোমাকেই বলে দেবো কি যে একা দীর্ঘ রাত, আমি হেঁটে গেছি বিরান পথে,
আমি তোমাকেই বলে দেবো সেই ভুলে ভরা গল্প, কড়া নেড়ে গেছি ভুল দরজায়,
ছুঁয়ে কান্নার জল, ছুঁয়ে জ্যোৎস্নার ছায়া......... "
ভুল দরজায় কড়া নেড়ে নেড়ে উনি একা হেঁটে চলে গেছেন উনার বিরান পথে......
আজ ১৯ নভেম্বর। প্রিয় মানুষ
সঞ্জীবদার চলে যাবার দিন। ঠিক
এই দিনেই দাদা আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন না ফেরার দেশে। কত সহজে তিনি
মানুষের মনে দাদার স্থান করে নিয়েছেন তা হয়তো উনিও জানতেন না। দেখতে দেখতে
কেটেও গেল ৫ টি বছর। কিন্তু দাদা রয়ে গেছেন সবার অন্তরে। থাকবেনও।
" ঐ কান্না ভেজা আকাশ আমার ভালো লাগে না, থমকে থাকা বাতাস আমার ভালো লাগে না........."
সংক্ষিপ্ত জীবনী ঃ ডিসেম্বর ২৫, ১৯৬২ সালে হবিগঞ্জ জেলার
বানিয়াচং উপজেলার মাকালকান্দি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ১৯৭৮ সালের
মাধ্যমিক এবং ১৯৮০ সালে তিনি উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় সম্মিলিত মেধা
তালিকায় স্থান দখল করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরুতে তিনি গণিত বিভাগে
ভর্তি হন কিন্তু বিভিন্ন কারণে তা শেষ না করে পাস কোর্সে স্নাতক পাস করেন।
তারপর সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রী করেন। ৯০ দশকের মাঝামাঝি সময়ে এসে
বাপ্পা দাকে সাথে নিয়ে গড়ে তুলেন "
দলছুট " এবং কাজ করেছেন
"আজকের কাগজ, ভোরের কাগজ, যায় যায় দিন" পত্রিকায়। "
আহা " এ্যালবামের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ হয় কিংবদন্তী সঞ্জীবদা এবং বাপ্পাদার দলছুটের । ২০০৭ এর আজকের এই দিনে তিনি চলে গেছেন তার
জ্যোৎস্না বিহারে। মস্তিষ্কে রক্ত ক্ষরণের কারণে এপোলো হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন। কিন্তু রয়ে গেছেন কোটি মানুষের মনে। "
কিংবদন্তী " নামের মেয়ে হয়তো বাবাকে না দেখার কষ্টে আজও নীরবে কাঁদে।
" ধরতে গিয়ে হেরে গেছি, দেখতে গিয়ে থেমে গেছি, হাত বাড়ালে নেই কেউ নেই। একা নিজেই......... "
না দাদা। তুমি একা নও। কোটি মানুষ তোমায় মনে নিয়ে বসে আছে। বাংলা সঙ্গীতে
এক অপূর্ণ অধ্যায় হয়ে থাকবে তুমি। তোমাকে হারিয়ে বাংলা গানের অনেক ক্ষতি
হয়ে গেল দাদা। আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেল।
" মেয়ে তুমি, এভাবে তাকালে কেন, এমন মেয়ে কি করে বানালে ঈশ্বর। আমাকে অন্ধ করে দিয়েছিল চাঁদ "
আমি উনাকে দেখিছি একজন খুবই সাধারণ মানুষ হিসেবে। কি সুন্দর করে প্রত্যেকটা
মানুষের সাথে কথা বলেছিলেন। গায়ে ছিল হালকা একটা ফতুয়া। যেন মিশে ছিলেন
আমাদের সাথে। এই কিংবদন্তীর কাছ থেকে অনেক কিছু পাবার আশা ছিল। সব আশা
ভেঙ্গে তিনি চলে গেলেন খুব তাড়াতাড়ি।
" চোখটা এতো পুরাই কেন, ও পুড়া চোখ সমুদ্রে যাও, সমুদ্র কি তোমার ছেলে আদর দিয়ে চোখে মাখাও...... "
গানকে যেন তিনি আগলে রেখেছিলেন আপন সন্তানের মতো। মূলত ক্লাসিক্যাল গান
আমরা তার কাছ থেকে বেশি পেয়েছি এবং অনেক ফোক গানও পেয়েছি। গানের জগতের
উজ্জ্বল নক্ষত্র নিজেই নক্ষত্র হয়ে গেলেন।
" দুঃখ ব্যথায় মুখটায়ে নীল, তোমার আমার না হলো মিল, নীল দুঃখের সেই
মেয়েটা পরের পরিমিতা, বুকের ভেতর জ্বলে শুধু ভালোবাসার চিতা......"
বড় অসময়ে চলে গিয়েছেন দাদা। আজ উনাকে দেখে অনেক কিংবদন্তী গড়ে উঠছে। খুবই
সাধারণ মানুষ সঞ্জীব দা মৃত্যুর পড়েও মানুষের সাহায্য করে গেছেন। তার
মরণোত্তর দেহটি তিনি দান করে গিয়েছেন। যাতে তার অঙ্গ নিয়ে বাঁচে থাকতে পারে
আরো কিছু মানুষ।
সঞ্জীব দার এই জায়গা কখনো পূরণ হবে না। তবে সঞ্জীব দা আমাদের মাঝে চিরকাল থাকবেন।